বালিয়া (উত্তরপ্রদেশ), ১৬ মার্চ ২০২৫: উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh ) বালিয়া জেলায় একটি মর্মান্তিক ঘটনায় ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে অপহরণ এবং গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশ রবিবার জানিয়েছে, বিহার থেকে আগত এই মেয়েটি তার বোনের শ্বশুরবাড়িতে এসেছিল। ডোকাটি থানা এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে, গত ১৪ মার্চ রাত ১০টায় অস্ত্রের মুখে তাকে অপহরণ করা হয় এবং তিন যুবক তার উপর গণধর্ষণ করে।
এই ঘটনায় রবিবার একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে একজনের নাম সূরজ সোনি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, বাকি দুজনের পরিচয় এখনও অজানা। মেয়েটির জামাইবাবু পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সূরজ সোনি এবং তার সঙ্গে থাকা দুই যুবক অস্ত্র দেখিয়ে মেয়েটিকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় এবং তিনজনই তাকে ধর্ষণ করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মেয়েটি বিহারের বাসিন্দা এবং তার বোনের শ্বশুরবাড়িতে অতিথি হিসেবে এসেছিল। ১৪ মার্চ রাতে ঘটনাটি ঘটে যখন সে তার আত্মীয়দের সঙ্গে ছিল। অভিযোগ অনুযায়ী, রাত ১০টার দিকে সূরজ সোনি এবং তার দুই সঙ্গী অস্ত্র নিয়ে এসে তাকে ভয় দেখায় এবং জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তারা মেয়েটির উপর গণধর্ষণ করে। ঘটনার পর মেয়েটি কোনোভাবে ফিরে আসতে সক্ষম হয় এবং তার পরিবারকে জানায়।
মেয়েটির জামাইবাবু অভিযোগে বলেন, “তারা অস্ত্র দেখিয়ে আমার ভগ্নিপতিকে অপহরণ করে। আমরা তাকে খুঁজতে গিয়েছিলাম, কিন্তু তারা তিনজনই তাকে ধর্ষণ করে ফেলে।” এই ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা গভীর শোকে মুহ্যমান এবং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ডোকাটি থানায় এফআইআর দায়েরের পর পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। বালিয়া জেলার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, “আমরা এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি অভিযান চলছে।” মেয়েটির চিকিৎসা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হচ্ছে। পুলিশ সূরজ সোনির খোঁজে নেমেছে এবং তার দুই অজ্ঞাতপরিচয় সঙ্গীকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছে।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অভিযুক্তরা স্থানীয় হতে পারে এবং তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই অপরাধ করেছে। এলাকায় সিসিটিভি ফুটেজ এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর বালিয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার এবং কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “একটি ১৪ বছরের মেয়ের উপর এমন নৃশংসতা অগ্রহণযোগ্য। পুলিশের উচিত এই অপরাধীদের শীঘ্রই ধরা।” নারী সংগঠনগুলিও এই ঘটনার নিন্দা করেছে এবং মেয়েটির জন্য ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছে।
উত্তরপ্রদেশে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা নতুন নয়। সম্প্রতি হাথরস এবং উন্নাও-এর মতো ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বালিয়ার এই ঘটনা আবারও রাজ্যে নারী নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলেছে।
মেয়েটির পরিবার এই ঘটনায় গভীরভাবে ভেঙে পড়েছে। তার জামাইবাবু বলেন, “আমরা তাকে নিরাপদে রাখতে পারিনি। আমরা শুধু চাই এই অপরাধীদের শাস্তি হোক।” মেয়েটির চিকিৎসা চলছে এবং তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা এখনও স্থিতিশীল নয়। পরিবারের সদস্যরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু এই ঘটনার ক্ষত সহজে মুছে যাবে না।
এই ঘটনায় বিরোধী দলগুলি উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারের সমালোচনা করেছে। সমাজবাদী পার্টির এক নেতা বলেন, “রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। মেয়েরা এখানে নিরাপদ নয়।” কংগ্রেসও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি।
এই ঘটনা নারী নিরাপত্তা এবং কিশোরীদের প্রতি সহিংসতার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা মনে করেন, শুধু শাস্তি দেওয়াই যথেষ্ট নয়, সমাজে সচেতনতা বাড়ানো এবং পুলিশি নজরদারি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। একজন সমাজকর্মী বলেন, “আমাদের মেয়েদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এই ধরনের ঘটনা আমাদের সবাইকে ভাবিয়ে তোলে।”
বালিয়ার এই নৃশংস ঘটনা একটি ১৪ বছরের কিশোরীর জীবনকে ধ্বংস করেছে এবং সমাজে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে তৎপর হলেও, এই ঘটনা নারী নিরাপত্তার প্রশ্নকে আবারও সামনে এনেছে। মেয়েটির জন্য ন্যায়বিচার এবং অপরাধীদের শাস্তি এখন সময়ের দাবি। এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের নয়, গোটা সমাজের জন্য একটি জাগরণের ডাক।