আজন্ম ‘বামপন্থী’ বুদ্ধদেবের মুখে গায়ত্রী মন্ত্র? অজানা কাহিনী শুনলে চমকে যাবেন!

একজন মানুষ জীবিত (Buddhadeb Bhattacharya) থাকাকালীন আমরা তাঁর সম্পর্কে অনেক কথাই জানতে পারি না। কিন্তু সেই মানুষটা যখন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চিরকালের মতো চলে যান,…

একজন মানুষ জীবিত (Buddhadeb Bhattacharya) থাকাকালীন আমরা তাঁর সম্পর্কে অনেক কথাই জানতে পারি না। কিন্তু সেই মানুষটা যখন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চিরকালের মতো চলে যান, তখন তারই স্মৃতিচারণে উঠে আসে একের পর এক না জানা কথা। সদ্য প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর (Buddhadeb Bhattacharya) স্মৃতিচারণে মগ্ন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে তার দলীয় সতীর্থ কর্মী সমর্থক এমনকী তাঁকে কাছ থেকে দেখা সাংবাদিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরাও। আপাতত কলকাতার পিস হেভেনে শায়িত রয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নশ্বর দেহ।

তাঁর সম্পর্কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ঘটনা, স্মৃতির মণিকোঠার তাক থেকে ধুলো ঝেড়ে নামিয়ে আনছেন অনেকেই। সেরকমই এক কাহিনী শোনা গেল দক্ষিণ 24 পরগনার জয়নগরের রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজের মুখে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সম্পর্কে একাধিক চমকপ্রদ কাহিনী ছড়িয়ে থাকলেও এই ঘটনা এর আগে খুব সম্ভবত বিশেষ কেউই শোনেননি।

   

জয়নগরের নিমপীঠের রামকৃষ্ণ আশ্রম আজও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখে করা মন্ত্রপাঠের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। বামপন্থী মতধারায় বিশ্বাসী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে কখনোই কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সেভাবে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর যেখানে যেটুকু উপস্থিতি একান্তই দরকার ছিল, সেখানে তিনি সেটুকুই উপস্থিতি রেখেছেন। বর্তমানে বঙ্গের রাজনীতিবিদদের মত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অহরহ উপস্থিতি তৎকালীন বেশিরভাগ বাম নেতারা এড়িয়ে চলেছিলেন।

একই সঙ্গে নন্দিত-নিন্দিত, ব্যতিক্রমী হিসাবেই বুদ্ধদেব চিরস্মরণীয় বঙ্গ রাজনীতিতে

আর এঁদের মধ্যে সবথেকে আগে যে নামটা আসবে তিনি হলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু একবার সুন্দরবনের কুলতলী পরিদর্শনে গিয়ে ফেরার পথে জয়নগরের এই রামকৃষ্ণ আশ্রমে এসে উপস্থিত হন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দ এবং সারদা মায়ের মূর্তি দর্শন করতে আশ্রম প্রাঙ্গণে মন্দির গৃহে প্রবেশ করেছিলেন।

সেখানেই ঠাকুরদের প্রণাম করে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের গলা থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই শোনা গিয়েছিল গায়ত্রী মন্ত্র। জনসমক্ষে গায়ত্রী মন্ত্র জপ করতে এর আগে কখনো পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা যায়নি। হয়তো এরপরেও না। যা সেই সময় সঙ্গে থাকা আধিকারিক নিরাপত্তারক্ষী এমনকি সাংবাদিকদের ও রীতিমত অবাক করে দিয়েছিল। ৮০ বছর বয়সী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে সেদিনের কথাই স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে আশ্রমের মহারাজের মুখে। এমনকী পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন এই আশ্রমের সঙ্গে বুদ্ধদেববাবুর যোগাযোগ ছিল বলেই দাবি তাঁর।

‘আবার আসবেন…’ বলেছিলেন বুদ্ধবাবু, ভারতে আশ্রিত শেখ হাসিনা শোকাচ্ছন্ন

বরাবরই রাজ্যের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল নিয়েই যথেষ্ট উৎসুক ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। লেখক অনুবাদক এবং নাট্যকার হিসেবেও যথেষ্ট সমাদর কুড়িয়েছেন। রাজনীতি থেকে কার্যত অবসর নেওয়ার পর লিখেছেন ‘স্বর্গের নিচে মহা-বিশৃঙ্খলা’-এর মতো বই। যা পাঠক মহলে যথেষ্ট প্রশংসা পেয়েছে। পেয়েছে ব্যবসায়িকভাবে সাফল্যও। এমনকী বুদ্ধদেবের হাত ধরেই রাজ্যের সংস্কৃতি চর্চার পীঠস্থান হিসেবে উঠে আসে নন্দন। একটা সময় মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নিজের কাজ কর্মের পর দীর্ঘ সময় নন্দনে বিভিন্ন সংস্কৃতিমনস্ক মানুষদের সাথে আলাপচারিতায় কাটাতেন।

কিন্তু কোন পুজো বা পূজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কখনোই সেই ভাবে দেখা যায়নি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। বর্তমানে বঙ্গের রাজনীতিতে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে পুজোয় জড়িয়ে পড়াটা কার্যত রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যেই পড়ছে শাসকদলের। দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি ক্লাবগুলির কাছে একটা আলাদা ‘মাইলেজ’ হিসাবে গণ্য হচ্ছে। কিন্তু একটা সময় বামশাসনে, বামপন্থার অনুশাসন মেনেই মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ধর্মীয় বিষয় থেকে নিজেকে আলাদাই রেখেছেন বরাবর।

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বুদ্ধদেবের শেষকৃত্য, ঘোষণা মমতার, কী জানালেন সেলিম?

যদিও তাঁর আরেক সতীর্থ সুভাষ চক্রবর্তীকে ঘিরে একাধিক বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তৎকালীন শ্রীভূমির দুর্গাপূজোর উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে মা তারার একনিষ্ঠ ভক্ত সুভাষ বাবুকে ঘিরে দলের মধ্যেই দ্বিধাবিভক্ত মনোভাব ছিল। কিন্তু সংস্কৃতিমনস্ক, পরিশীলিত মানসিকতার জন্য বরাবরই সমাদর কুড়িয়ে গিয়েছেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ৮০ বছর বয়সে পরলোক গমন করেছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। নিজের দলের কর্মী সমর্থক বা সতীর্থরা তো বটেই, একদা প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের গলাতেও আজ যেন বিষাদের সুর। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ব্যক্তি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে স্মরণ এবং কুর্নিশ করছেন সমস্ত বাঙালি।