কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী দলের সাংসদরা বৃহস্পতিবার লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। ১৯৫৫ সালের ওয়াকফ সংশোধন বিলের লক্ষ্য হল, রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা, ওয়াকফ সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন এবং জরিপ এবং দখল অপসারণ সংক্রান্ত সমস্যাগুলির সমাধান করা
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু ওয়াকফ সংশোদী বিল পেশ করেন। বিলটি ১৯৫৫ ওয়াকফ আইনের ৪৪টি ধারা সংশোধন করার প্রস্তাব করেছে। বিলটিতে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল এবং রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে অবশ্যই দু’জন মহিলা থাকতে হবে। ওয়াকফ বোর্ড কর্তৃক প্রাপ্ত অর্থ অবশ্যই বিধবা, বিবাহবিচ্ছেদ এবং এতিমদের কল্যাণে সরকার দ্বারা প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে হবে। আরেকটি মূল প্রস্তাব হল, নারীর উত্তরাধিকার রক্ষা করতে হবে। ওয়াকফ সংস্থার অমুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার বিধান প্রস্তাবিত আইনের আরেকটি বিতর্কিত বিষয়।
লোকসভায় বিলের আলোচনার সময়, কংগ্রেসের কেসি ভেণুগোপাল প্রস্তাবিত আইনটিকে ‘কঠোর’ বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন এটি ধর্মের স্বাধীনতা এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উপর আক্রমণ। ওই কংগ্রেস সাংসদ, ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য নিয়োগের বিধানেরও বিরোধিতা করেছিলেন।
Bangladesh: প্রতিবেশী বাংলাদেশে অশান্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ ভারতীয় সেনার সিডিএসের
দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী শক্তি সমাজবাদী পার্টিও ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করেছে। অখিলেশ যাদব বলেন, “এই বিলটি সুচিন্তিত রাজনীতির অংশ হিসাবে আনা হয়েছে। যখন নির্বাচনের জন্য একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আছে, তখন কেন লোকদের মনোনীত করা হবে। মুসলিম সম্প্রদায়ের বাইরের অন্য ধর্মের কোনও ব্যক্তি কেন পরিচালন ব্যবস্থার অংশ হবেন। এর অন্তর্ভুক্ত করার অর্থ কী?”
সমাজবাদী পার্টির আরেক সাংসদ মহিবুল্লাহ বলেছেন, “এটি মুসলমানদের প্রতি অবিচার। আমরা একটি বড় ভুল করতে চলেছি, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই বিলের কারণে আমরা ভুগব। এটা ধর্মে হস্তক্ষেপ।”
এর আগে, অখিলেশ যাদব অভিযোগ করেছিলেন যে, বিজেপি সংশোধনীর আড়ালে ওয়াকফ বোর্ডের জমি বিক্রি করতে চায়। বলেছিলেন, “ওয়াকফ বোর্ড’-এর এই সমস্ত সংশোধনীগুলি একটি অজুহাত মাত্র, প্রতিরক্ষা, রেলপথ এবং নজুল জমি বিক্রি করাই লক্ষ্য।”
ডিএমকে সাংসদ তথা করণানিধি কন্যা কানিমোঝি বলেন, “এটা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ। খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের পক্ষে কি হিন্দু মন্দির পরিচালনা করা সম্ভব হবে?”
স্বাস্থ্য-জীবন বিমা প্রিমিয়ামে জিএসটি বাতিলের দাবি, ‘নাকট’ বলে বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ নির্মলার
পাল্টা বিলের পক্ষে এনডিএ শরিক জেডিইউ সাংসদ রাজীব রঞ্জন সিং বলেছেন, “বিলটি ওয়াকফ বোর্ডের কাজকর্মকে স্বচ্ছ করতে আনা হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগের পাল্টা রাজীব রঞ্জন সিং, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পরে ১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গার কথা উল্লেখ করেন। জানতে চান, “কে হাজার হাজার শিখকে হত্যা করেছে?”
এনসিপির শরদ পাওয়ার গোষ্ঠীর সুপ্রিয়া সুলে বলেছেন যে, বিলটি সংসদে পেশের আগে সরকার বিশদ পরামর্শ করেনি। তাঁর প্রশ্ন, “অনুগ্রহ করে এটিকে আরও ভাল পরামর্শের জন্য স্থায়ী কমিটিতে পাঠান। সময়টি উদ্বেগের বিষয়। ওয়াকফ বোর্ডে হঠাৎ কী হল যে আপনাদের বিল আনতে হবে?”
ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগের ইটি মহম্মদ বশীর এবং সিপিএম-এর কে রাধাকৃষ্ণণও বিলের বিরোধিতা করেছেন।
এআইএমআইএম সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বিরোধিতা করে বিলটিকে বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর উপর একটি গুরুতর আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর যুক্তি, কারণ এটি বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা লঙ্ঘন। বলেছেন, “মুসলিমরা কীভাবে তাদের ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনা করবে, সরকার তা কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করেছে।”