UN: জঙ্গি হামলায় নিহত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর রফিক হারিরির হত্যা তদন্ত বন্ধ করল রাষ্ট্রসংঘ

রাষ্ট্রসংঘের (UN)মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ২০০৫ সালে লেবাননের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরির হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য তৈরি বিশেষ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন। ২০০৫ সালে ১৪…

Lebanon former Prime Minister Rafik Hariri

রাষ্ট্রসংঘের (UN)মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ২০০৫ সালে লেবাননের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরির হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য তৈরি বিশেষ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন। ২০০৫ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি ট্রাক বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন হারিরি।এই বিস্ফোরণের জন্য হিজবুল্লাহর তিন সদস্যকে দোষীও সাব্যস্ত করা হয়। যারা হত্যার প্রায় ১৯ বছর পরেও পলাতক।

হিজবুল্লাহ অবশ্য রফিক হারিরির হত্যাকাণ্ডে সংগঠনের সদস্যদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। হিজবুল্লাহও বিশেষ ট্রাইবুনালের বিচারে অংশ নিতে অস্বীকার করেছিল। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বোমা হামলায় লেবাননের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি এবং তার কনভয়ের ২১ জন নিহত হন। রাষ্ট্রসংঘের মতে, হারিরির হত্যাকাণ্ডে ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ কিলোগ্রাম ডিনামাইটের সমতুল্য বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল। এই হামলা এতটাই ভয়ানক ছিল যে বেইরুটের যেস্থানে বিস্ফোরণ হয় সেখানে ১১ মিটার চওড়া গর্ত হয়ে যায়।

কে এই রফিক হারিরি?

লেবাননের পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন। তার পুরো নাম রফিক বাহা আল-দিন আল হারিরি। তিনি একজন ব্যবসায়ী, নেতা এবং জনহিতৈষী কাজের জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৯৪৪ সালের ১ নভেম্বর লেবাননের সিডনে এক দরিদ্র সুন্নি মুসলিম কৃষকের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বেইরুট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরে সৌদি আরবে চলে যান।

১৯৭০ সালে নিজের নির্মাণ ব্যবসা শুরুর আগে তিনি একটি সৌদি কন্সট্রাকশন কোম্পানির শিক্ষক ও হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করেন। এ সময় তিনি মধ্যপ্রাচ্যে হোটেল, কনভেনশন সেন্টার ও প্রাসাদ নির্মাণ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। তিনি ব্যাংকিং, রিয়েল এস্টেট, বীমা এবং টেলিযোগাযোগে বিনিয়োগ করেছিলেন।

রফিক হারিরি লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন পাঁচবার

রফিক হারিরি লেবাননের উন্নয়নের অঙ্গীকার নিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। হারিরি ১৯৭৫-১৯৯০ সালের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে পাঁচবার লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, কিন্তু সিরিয়ার আধিপত্যের কারণে ২০০৪ সালের অক্টোবরে পদত্যাগ করেন। ১৯৯২ সালে তিনি প্রথম লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি ১৯৯৮ সালে এবং তারপরে ২০০০ সালে এবং ২০০৪ সালের অক্টোবরে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত লেবাননের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

এই সময়ে হারিরি দেশের উন্নয়নে নজর দেন। দেশের পরিকাঠামো মজবুত করতে প্রচুর বিনিয়োগ করেন , ইজরায়েলের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তির আলোচনা, দেশে এবং বিদেশে সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটিয়ে লেবাননকে মধ্যপ্রাচ্যের আর্থিক ও ব্যবসায়িক রাজধানীতে পরিণত করা । ইজরায়েলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে, তিনি দক্ষিণ লেবাননের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেন, যা ইজরায়েল ২২ বছর ধরে দখল করে রেখেছিল।

সিরিয়া থেকে লেবাননের স্বাধীনতা লাভ

২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বেইরুটে হারিরিকে হত্যার পর সিরিয়ার সঙ্গে লেবাননের উত্তেজনা বেড়ে যায়। হারিরিকে হত্যার পেছনে সিরিয়ার নেতাদের ষড়যন্ত্র বলে সন্দেহ করা হয়। লেবাননের স্থানীয় নেতারা সিরিয়াকে দেশ ছাড়ার জন্য চাপ দেন। অবশেষে, রাষ্ট্রসংঘ থেকে সিরিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়, যার কারণে সিরিয়া ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে লেবানন থেকে তার বাহিনী প্রত্যাহার করে। ২৯ বছর পর লেবানন স্বাধীন হয়।

২০২০ সালে লেবাননের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রফিক হারির হত্যা মামলার রায় দেন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা। বিচারকরা কেবল সেলিম জামিল আয়াশকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন এবং বাকি দুইজন হাসান হাবিব মেরি এবং হুসেইন হাসান ওনেসিকে বেকসুর খালাস করে দেন। পরে ২০২২ সালের এক রায়ে ট্রাইব্যুনাল দুজনকে খালাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এবং তাদের দোষী সাব্যস্ত করে। হিজবুল্লাহ তাদের সবাইকে হিজবুল্লাহর সদস্য হওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। তবে তিনজনই এখনও পলাতক।

বিচারকরা আরও বলেছেন যে হিজবুল্লাহ নেতৃত্ব বা সিরিয়া হামলায় জড়িত ছিল এমন কোনও প্রমাণ নেই।তবে হারিরি এবং তার রাজনৈতিক সহযোগীরা সিরিয়াকে লেবানন থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের জন্য বলা উচিত কিনা তা নিয়ে আলোচনা করার সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।২০২৩ সালের শুরুর দিকে ট্রাইব্যুনালের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল, তবে সাম্প্রতিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে এর উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে এবং তাই ট্রাইব্যুনালটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।