বিশ্বের অন্যতম সর্বোত্তম বাসযোগ্য শহর এবং অর্থনৈতিক শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত টোকিও (Tokyo) সম্প্রতি এক নতুন বিপদময় প্রবণতার মুখোমুখি হচ্ছে। সেখানে সেক্স পর্যটন ক্রমবর্ধমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষত বিদেশী পুরুষরা, যারা শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, মহিলাদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এই শহরটি সেই জায়গা নয়, যা আপনি ভাবছেন। ব্যাংকক বা থাইল্যান্ডের অন্যান্য শহরের নাম মনে আসলেও, টোকিও বর্তমানে যৌন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বেশ কিছু কারণে টোকিও এবং জাপান এখন যৌন পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে অন্যতম হল ইয়েনের অবমূল্যায়ন, যা বিদেশী পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এছাড়া, করোনাভাইরাস মহামারীর পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক পর্যটন বেড়ে গেছে, যা টোকিওতে যৌন পর্যটন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
জাপানের “সেইবোরেন” নামক সংস্থার মহাসচিব ইয়োশিহিদে তানাকা জানান, “জাপান এখন একটি দরিদ্র দেশ হয়ে উঠেছে।” তিনি আরো বলেন, “যতটা আমরা দেখছি, বিদেশী পুরুষরা পার্কগুলোতে এসে মহিলাদের খুঁজছেন এবং যৌন সেবা কিনছেন।” তাঁর মতে, বিদেশী পর্যটকদের আগমন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যৌন ব্যবসার পরিমাণও বেড়ে গেছে, বিশেষত চীনা পর্যটকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে এই সমস্যার পেছনে রয়েছে একাধিক সামাজিক এবং আর্থিক কারণ। জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য কাজুনোরি ইয়ামানোই জানিয়েছেন, “এটি আর কেবল দেশীয় সমস্যা নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “এটি এমন একটি সমস্যা যেখানে জাপানি মহিলাদের প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদের সম্মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, মহামারী পরবর্তী অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং মহিলাদের আর্থিক দুরাবস্থা তাদেরকে যৌন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়তে বাধ্য করেছে। অনেক মহিলাই ঋণ পরিশোধ করতে বা হোস্ট ক্লাবে খরচ করতে যৌন ব্যবসার দিকে চলে গেছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান, বিশেষত হোস্ট ক্লাবগুলো, যেগুলো পুরুষদের সাথে মহিলাদের মেলামেশা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে, তাদের বিভিন্ন কৌশলে মহিলাদের একটি ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলে। এই ঋণ মেটানোর জন্যই বহু নারী যৌন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন।
জাপান টাইমস জানায়, গত বছর টোকিও মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রায় ৫০০ জন নারীকে আটক করেছে যারা খোলামেলা রাস্তায় কাজ করছিলেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ২০ বছরের নিচে, এবং তাদের অভিযোগ ছিল যে তারা হোস্ট ক্লাবে খরচ করার জন্য অথবা তাদের ঋণ শোধ করতে যৌন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে, পুলিশ বিভাগ এই ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গত সপ্তাহে, টোকিও মেট্রোপলিটন পুলিশ ৫ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে, যারা মহিলাদেরকে যৌন ব্যবসায় নিয়োগ দিতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছিলেন। এই অপারেশনের মাধ্যমে দেশব্যাপী ৩৫০টি দোকানে মহিলাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছিল।
তবে, এই ধরনের অপরাধ শুধুমাত্র স্থানীয় সমাজের জন্যই ক্ষতিকর নয়, বরং এটি জাপান এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মহিলাদের প্রতি একটি খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করছে। এক্ষেত্রে, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং আইনগত সংস্কার খুবই জরুরি। তবে, পরিতৃপ্তি জনক বিষয় হল, যদিও জাপানেও যৌন ব্যবসা রয়েছে, তবে অন্য অনেক দেশের তুলনায় এটি একটি নিয়ন্ত্রিত ক্ষেত্র এবং নারী শ্রমিকদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কিছু আইন এবং ব্যবস্থা রয়েছে।
অবশ্য, এটি পরিষ্কার যে এই ধরনের পরিস্থিতির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন। টোকিও এবং অন্যান্য জাপানি শহরগুলোতে যৌন পর্যটনের বৃদ্ধির ফলে কেবল অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, বরং সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
এমন পরিস্থিতি দূর করতে প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক পর্যটন এবং যৌন ব্যবসার সম্পর্কিত গুরুতর সমস্যাগুলোর প্রতি নজর দেওয়া জরুরি, যাতে মহিলাদের শোষণ বন্ধ করা যায় এবং একটি নিরাপদ, শালীন পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।