বিছানায় বিপদ! চিটচিটে ঘাম চাটতে আসে ফনাহীন বিষাক্ত সুন্দরী কালাচ

আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন…! মন উতলা হয় কেউটে সুন্দরী কালাচের। সে আসে চুপি চুপি। অভিসার? হয়ত তেমনই ইচ্ছে হয়। মনকাড়া ঘামের আকর্ষণে ভালোবাসা…

আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন…! মন উতলা হয় কেউটে সুন্দরী কালাচের। সে আসে চুপি চুপি। অভিসার? হয়ত তেমনই ইচ্ছে হয়। মনকাড়া ঘামের আকর্ষণে ভালোবাসা উথলে ওঠে। নীরবে জড়িয়ে ধরে মনের মানুষকে। তারপর তাকে রোখা যাবে না। ঘামে মাতাল কালাচ মুখ ডুবিয়ে দেয় গলায়-ঘাড়ে, পিঠে। সে ভয়াবহ এক মৃত্যু আলিঙ্গন।

   

বিশ্ব সাপ দিবস পালিত হচ্ছে। প্রকৃতির বিস্ময় সৃষ্টি গ্রাম বাংলার ‘ঘামচাটা’ সাপ নিয়ে থাকল কিছু কথা। গবেষকরা প্রমাণ করেছেন সর্পকূলে কালাচ এক অদ্ভুত চরিত্র নিয়ে চলে। তাকে আকর্ষন করে মানুষের ঘাম।

শতাধিক প্রজাপতির সাপের দেখা মেলে। বেশির ভাগই বিষহীন। কিছু সাপ আছে যাদের ছোবলে মৃত্যু হতে পারে। গবেষকরা বলছেন, এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ৩-৪ প্রজাতির গোখরো, কেউটে, ২ প্রজাতির ঢোঁড়া, ৪ প্রজাতির বোড়া, ৩/৪ প্রজাতির সামুদ্রিক সাপ। বিষধর কেউটের দুটি ভাগ-ফনাযুক্ত ও ফনাহীন। এই ফনাহীন কেউটে সাপ কালাচ (Common Krait)।

কালাচ নিশাচর। রাতেই তার আনাগোনা। মিশকালো অন্ধকারে মিশে যায় তার গায়ের রঙ। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এরা খাড়াভাবে বিছানার উপরে উঠতে পারে। এরা ঘুমন্ত মানুষের ঘামের গন্ধে আসে। তাই গ্রাম বাংলায় কালাচের নাম ঘামচাটা সাপ। নিশ্চিন্তে ঘুমন্ত মানুষের পাশে শুয়ে থাকে কালাচ। ঘুমন্ত অবস্থায় হাত পা নড়াচড়া করলে নীরবে একটি ছোবল মারে কালাচ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কালাচ একটি ছোবলে একশ শতাংশ বিষ ঢেলে দেয় যা অন্য বিষধর সাপ করে না। এই সাপ দংশন করলে মানুষ সেটা বুঝতেই পারে না। এর দংশনে বেশিরভাগ সময় দাগ পড়ে না। জ্বালা যন্ত্রণা হয় না, আক্রান্ত জায়গা ফোলেও না। গবেষণায় উঠে আসে ৯০ শতাংশ রোগী বুঝতেই পারে না তাকে সাপে ছোবল মেরেছে।

তবে এটাই বিপদ। কালাচের ছোবল খেয়ে সারারাত ঘুমিয়ে ভোরে তলপেটে প্রচণ্ড ব্যাথা নিয়ে ঘুম ভাঙবে। চোখের পাতা পড়ে আসবে। বমি বমি ভাব হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন রক্ত জমাট বাঁধা শুর হয়ে যায়। এমন লক্ষণ দেখলেই রোগীকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। অ্যান্টি স্নেক ভেনাম (এভিএস) প্রয়োগ করতে হবে। চিকিৎসা না হলে রোগী ধীরে ধীরে শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাবে।

সাপ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষাকালে মশারি বিশেষ নিরাপদ। কালাচ সাপ থেকে বাঁচতে অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমোতে হবে। বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখতে হবে।

সর্পকূলের নীরব ঘাতক কালাচ। যেমন রূপ তেমনই বিষ। অথচ শান্ত আচরণ। এমন কালাচ নাগজাতির সুন্দরী। এ সাপের আচরণ ঠিক যেন কূটকৌশলী প্রাচীন বিষকন্যাদের মত।