নজিরগড়া রাজনৈতিক মোড় নিল দ্বীপদেশ (Sri lanka) শ্রীলঙ্কা। দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে প্রথমবার বাম জোট ক্ষমতায়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলেন (Anura Kumara Dissanayake) অনুরা কুমারা দিশানায়েকে। ‘চাষার ব্যাটা’ হলেন লঙ্কেশ্বর। নির্বাচনী ফলাফলে লাল হয়ে গেছে লঙ্কা।
অনুরা কুমারা দিসানায়েকে। তিনি কমিউনিস্ট নেতা ও জেভিপি দলের নেতা। দলটির গঠণতন্ত্রে স্পষ্ট উল্লেখ আছে এই দলের রাজনৈতিক নীতি ‘মার্কসবাদী-লেনিনবাদী’। ব্রিটিশ উপনিবেশ থেতে স্বাধীন হবার পর এই দেশটিতে পরিবারতন্ত্র ভিত্তিক রাজনীতির জয় হয়ে আসছিল। সেই ধারা লাল সুনামিতে ভেসে গেল।
নির্বাচনে বিপুল জয় পেলেও দিসানায়েকে প্রথম গণনায় ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। নিয়ম অনুসারে ৫১ শতাংশ ভোট পেতে হবে। সেটি না হলে সর্বাধিক দুই ভোট প্রাপকের মধ্যে কে দ্বিতীয় পছন্দে বেশি ভোট পেলেন সেটি গণনা হবে। দ্বিতীয় পছন্দেও লাল সুনামি দ্বীপদেশে। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে দ্বিতীয়বার ভোট গণনার ঘটনা ছিল এই প্রথম।
দুই শীর্ষ প্রতিযোগী এনপিপি অর্থাৎ বাম জোটের অনুরা কুমারা দিসানায়েকে ও সাজিথ প্রেমাদাসা ছাড়া বাকিরা প্রার্থীরা নির্বাচনী লড়াই থেকে বাদ পড়ে যান তুলনামূলক কম ভোট পাওয়ার কারণে। এই তালিকায় ছিলেন সদ্য প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি শ্রীলংকার গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার চালাচ্ছিলেন।
গণনা শেষ হওয়ার পর দেশটির নির্বাচন কমিশন দিসানায়েকেকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দিসানায়েকে শপথ নেবেন।
২০২২ সালের ১৩ই জুলাই গণবিক্ষোভের মুখে শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকসা সরকারের পতন হয়েছিল। দেশ ছেড়ে পালান তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসা ও প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপাকসা।অভ্যুত্থানের সপ্তাহখানেক পর রনিল বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। শ্রীলঙ্কায় গণ-বিক্ষোভের মুখে রাজাপাকসা সরকারের পতনের পর প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় শনিবার।
লঙ্কার লাল রাজনীতি:
শ্রীলংকায় সশস্ত্র বাম রাজনীতি তথা অতিবাম রাজনীতির ধারা দীর্ঘ সময় চলেছে। ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকার সময় তৎকালীন সিলোন (সিংহল) জুড়ে এই ধারার রাজনীতির অন্যতম নেতা ছিলেন ডা. এন এম প্যারেরা। তাঁর দল লঙ্কা সমসমাজ পার্টি ট্রটস্কিপন্থী বলে পরিচিত ছিল। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর দেশটির আত্মগোপনকারী বাম নেতারা ভারত থেকে ফিরেছিলেন। পরে ডা. এন এম প্যারেরা হয়েছিলেন তাঁর দেশের মন্ত্রী। লঙ্কা সমসমাজ পার্টির ভিতর পরে রাজনৈতিক বিভাজন আসে।
১৯৬০ দশক থেকে শ্রীলংকায় সশস্ত্র বাম আন্দোলনের ধারা তৈরি হয়েছিল। সেই ধারা থেকে জন্ম হয় জেভিপি পার্টির। দলটি তামিল সশস্ত্র গোষ্ঠী কখনো সরকার বিরোধী কখনো সরকারের পাশে থেকে এলটিটিই বিরোধী সশস্ত্র পথ নিয়েছিল। পরে সেই পথ ত্যাগ করে ভোটের পথ নেয়। টানা ছয় দশক ধরে সক্রিয় জেভিপি। এই দলটি দেশটির প্রান্তিক রাজনৈতিক দল থেকে এখন সরকারে।