ক্ষমতায় আসছে শ্রীলঙ্কার ‘বামফ্রন্ট’, দ্বীপদেশের ব্যালটে লাল সুনামি

লাল লঙ্কা! ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘেরা দ্বীপদেশে (Sri Lanka) আছড়ে পড়ল লাল সুনামি। এমনই সংবাদ দিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা। লঙ্কেশ্বর হতে চলেছেন দেশটির বামফ্রন্ট…

Sri lanka

লাল লঙ্কা! ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘেরা দ্বীপদেশে (Sri Lanka) আছড়ে পড়ল লাল সুনামি। এমনই সংবাদ দিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা। লঙ্কেশ্বর হতে চলেছেন দেশটির বামফ্রন্ট জোটের মুখ কমিউনিস্ট নেতা (Anura Kumara Dissanayake) অনুরা কুমারা দিসানায়েকে। তিনি জেভিপি দলের নেতা। দলটির গঠণতন্ত্রে স্পষ্ট উল্লেখ আছে এই দলের রাজনৈতিক নীতি ‘মার্কসবাদী-লেনিনবাদী’।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেশটির বামপন্থী জোট ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) প্রার্থী অনুরা কুমারা দিসানায়েকের বিপুল জয়ের সংবাদ দিয়েছে বিবিসি। ব্রিটিশ উপনিবেশ থেতে স্বাধীন হবার পর এই দেশটিতে পরিবারতন্ত্র ভিত্তিক রাজনীতির জয় হয়ে আসছিল। সেই ধারা লাল সুনামিতে ভেসে গেল।

   

শ্রীলংকায় সশস্ত্র বাম রাজনীতি তথা অতিবাম রাজনীতির ধারা দীর্ঘ সময় চলেছে। ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকার সময় তৎকালীন সিলোন (সিংহল) জুড়ে এই ধারার রাজনীতির অন্যতম নেতা ছিলেন ডা. এন এম প্যারেরা। তাঁর দল লঙ্কা সমসমাজ পার্টি ট্রটস্কিপন্থী বলে পরিচিত ছিল। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর দেশটির আত্মগোপনকারী বাম নেতারা ভারত থেকে ফিরেছিলেন। পরে ডা. এন এম প্যারেরা হয়েছিলেন তাঁর দেশের মন্ত্রী। লঙ্কা সমসমাজ পার্টির ভিতর পরে রাজনৈতিক বিভাজন আসে।

১৯৬০ দশক থেকে শ্রীলংকায় সশস্ত্র বাম আন্দোলনের ধারা তৈরি হয়েছিল। সেই ধারা থেকে জন্ম হয় জেভিপি পার্টির। দলটি তামিল সশস্ত্র গোষ্ঠী কখনো সরকার বিরোধী কখনো সরকারের পাশে থেকে এলটিটিই বিরোধী সশস্ত্র পথ নিয়েছিল। পরে সেই পথ ত্যাগ করে ভোটের পথ নেয়। টানা ছয় দশক ধরে সক্রিয় জেভিপি। এই দলটি দেশটির প্রান্তিক রাজনৈতিক দল থেকে এখন সরকারে।

২০২২ সালের ১৩ই জুলাই গণবিক্ষোভের মুখে শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকসা সরকারের পতন হয়েছিল। দেশ ছেড়ে পালান তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসা ও প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপাকসা।অভ্যুত্থানের সপ্তাহখানেক পর রনিল বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। শ্রীলঙ্কায় গণ-বিক্ষোভের মুখে রাজাপাকসা সরকারের পতনের পর প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় শনিবার। সরকারের প্রধান বিক্রমাসিংহে নির্বাচনে পরাজিত বলেই খবর দিচ্ছে শ্রীলংকার সংবাদমাধ্যম।

১ কোটি ৭০ লাখ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ এবারের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে শ্রীলংকার নির্বাচন কমিশন। এর আগে, ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮৩ দশমিক ৭২ শতাংশ।

শ্রীলঙ্কার এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মূলত তিনজন প্রার্থী বেশি আলোচিত। তারা হলেন বাম জোটের প্রার্থী অনুরা কুমারা দিসানায়েকে, নির্দল প্রার্থী রনিল বিক্রমাসিংহে এবং বিরোধীদল ‘সঙ্গী জন বালাওয়াগার’ (এসজেবি) প্রার্থী সজিথ প্রেমাদাসা। সরকার গড়তে চলা দিসানায়েকে একজন মার্ক্সবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত। তার দল বিমুক্তি পেরেমুনা (জেভিপি) বাম জোটের বড় শরিক। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সুশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দিসানায়েকে।