প্যারিস: পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত শিল্পমন্দির, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের লুভ্র মিউজিয়াম (Louvre Museum) রবিবার সকালে হঠাৎ করেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কারণ, সেখানে ঘটে গেছে এক অভাবনীয় ডাকাতি! ফরাসি সংবাদমাধ্যমের খবর, অজ্ঞাতপরিচয় একদল দুষ্কৃতী মিউজিয়ামে ঢুকে মহামূল্যবান গয়না লুঠ করে পালিয়েছে। যদিও মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত চুরির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি, তবে ফ্রান্স সরকারের এক মন্ত্রীর বক্তব্যেই পরিষ্কার হয়েছে ঘটনাটি সত্যিই ঘটেছে।
ফ্রান্সের সংস্কৃতি মন্ত্রী রচিদা দাতি (Rachida Dati) নিজেই এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লেখেন, “আজ সকালে লুভ্র মিউজিয়াম খোলার পর সেখানে ডাকাতি হয়েছে। কেউ আহত হননি। আমি পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থলে রয়েছি।” মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের দাবি, “অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে আপাতত মিউজিয়াম বন্ধ রাখা হয়েছে।”
বিশ্বকাপের পর নতুন ইনিংস! ‘ইন্দোরের বউমা’ হচ্ছেন তারকা ক্রিকেটার
লুভ্র মিউজিয়াম এমন এক স্থান, যা শুধু ফ্রান্স নয়, গোটা বিশ্বের শিল্পপ্রেমীদের কাছে এক তীর্থক্ষেত্র। লিওনার্দো দা ভিঞ্চির কিংবদন্তি ‘মোনালিসা’ সহ বিশ্বের সেরা শিল্পকর্মগুলির ভাণ্ডার এই মিউজিয়াম। সেই জায়গাতেই ডাকাতি ঘটনাটি রীতিমতো আলোড়ন তুলেছে আন্তর্জাতিক মহলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতের শেষ ভাগ বা রবিবার সকালে স্কুটারে চেপে কয়েকজন মুখোশধারী মিউজিয়ামের পিছনের অংশ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। তাদের হাতে ছিল লোহার ছোট করাত। মালপত্র তোলার জন্য ব্যবহৃত লিফট ব্যবহার করে তারা মিউজিয়ামের নির্দিষ্ট একটি কক্ষে পৌঁছয়, যেখানে মূল্যবান গয়না ও প্রদর্শনী সামগ্রী রাখা ছিল। মুহূর্তের মধ্যেই তারা নির্দিষ্ট প্রদর্শনী কাচ ভেঙে গয়না নিয়ে চম্পট দেয়।
চুরি যাওয়া গয়নাগুলির প্রকৃতি বা মূল্য নিয়ে এখনও কিছু জানায়নি প্রশাসন। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, চুরি হওয়া বস্তুগুলির মূল্য কয়েক কোটি ইউরো হতে পারে। এখনো পর্যন্ত ডাকাতদের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।
সিসিটিভি ফুটেজ ও মিউজিয়ামের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ক্যামেরা খতিয়ে দেখছে ফরাসি পুলিশ। ডাকাতির খবর ছড়িয়ে পড়তেই মিউজিয়ামের বাইরের অংশে বিশাল নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দারা বাইরে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করছেন। দর্শনার্থীদের জানানো হয়েছে, মিউজিয়াম আজকের জন্য বন্ধ থাকবে। তবে কবে এটি আবার খুলবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এদিকে, এই ঘটনাকে ঘিরে মিউজিয়ামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও তীব্র প্রশ্ন উঠছে। ইউরোপের অন্যতম সুরক্ষিত বলে পরিচিত লুভ্র কীভাবে এত সহজে ভেঙে ঢুকে পড়ল দুষ্কৃতীরা সেটি নিয়েই এখন আলোচনা চলছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।
একজন স্থানীয় গাইড বলেন, “লুভ্রের নিরাপত্তা এমন পর্যায়ের যে সাধারণ মানুষ তো দূর, কর্মচারীরাও নির্দিষ্ট অনুমতি ছাড়া কিছু এলাকায় যেতে পারেন না। তবুও যদি চুরি হয়, তা হলে কোথাও না কোথাও বড়সড় গাফিলতি হয়েছে।”
ফরাসি পুলিশ ইতিমধ্যেই মিউজিয়ামের নিরাপত্তা কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। পাশাপাশি শহরের প্রবেশপথে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদের এই চুরির ঘটনায় হতবাক প্যারিসবাসী। মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সমস্ত প্রদর্শনী সামগ্রী পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে যাতে কোনো ঐতিহাসিক নিদর্শন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।