Henry Kissinger: ইন্দিরার ‘শত্রু’ বিজেপির ‘বন্ধু’ কিসিঞ্জার ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে যুদ্ধে উস্কেছিলেন

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ‘কেউ বলে নায়ক, কেউ বলে খলনায়ক’-এভাবেই হেনরি কিসিঞ্জার (Henry Kissinger) পরিচিত। সুমেরু-কুমেরুর মতো শীতল এলাকার প্রাণীরা যেমন, ঠিক তেমনই শীতল কিসিঞ্জারের মস্তিষ্ক। যে…

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ‘কেউ বলে নায়ক, কেউ বলে খলনায়ক’-এভাবেই হেনরি কিসিঞ্জার (Henry Kissinger) পরিচিত। সুমেরু-কুমেরুর মতো শীতল এলাকার প্রাণীরা যেমন, ঠিক তেমনই শীতল কিসিঞ্জারের মস্তিষ্ক। যে মস্তিষ্ক বারবার বিশ্বকে তোলপাড় করেছিল, গরম করেছিল। কিসিঞ্জার সূত্র ধরেই আমেরিকা হয়েছে বিশ্বের সর্বাধিক শক্তিধর দেশ। তবে সাম্প্রতিক এই কূটনৈতিক শক্তির অপর কেন্দ্র চিন। অভূতপূর্ব জীবনীশক্তির কিসিঞ্জার শতবর্ষী হয়েও চিনে চলে গেছিলেন। কী আলোচনা করেছিলেন?  মৃত্যুর আগে কূটনৈতিক নিয়ম মেনে নীরব থেকে জীবন শেষ করেছেন। কিসিঞ্জার নামটির সাথে জড়িয়ে আছে  একাধিক দেশে রক্তাক্ত সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা।

গত ষাট বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বকে তোলপাড় করা ষড়যন্ত্রের ‘সাদা মাকড়সা মানুষ’ হেনরি কিসিঞ্জার কূটনীতির গর্ব ও ধিকৃত ব্যক্তিত্ব। তাঁর উস্কানিতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান হামলা করেছিল ভারতে। সেই ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষে তৎকালীন আমেরিকান বিদেশ সচিব হেনরি কিসিঞ্জারের বার্তায় মার্কিন নৌবহর আসছিল ভারতে হামলার জন্য। ভ্রু কুঁচকে এই সংবাদটি শুনেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। শুরু হয়েছিল প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা আর হেনরি কিসিঞ্জারের কূটনৈতিক সাপ-লুডো খেলা।

‘আমি পাকিস্তানের বন্ধু’ এই বার্তা ইন্দিরা গান্ধীকে দিয়েছিলেন কিসিঞ্জার। আর ভারতবন্ধু কমিউনিস্ট দেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন বুঝল বিপদ। ইন্দিরার এক ফোনে  সোভিয়েত তাদের নৌবাহিনীকে ভারত রক্ষায় পাঠাতে শুরু করল। বিশ্ব স্তম্ভিত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ঘিরে মহাসাগরে এবার মুখোমুখি হয়েছে সোভিয়েত ও আমেরিকা। সে এক ক্রান্তিকাল-সত্তর দশক। ভারতীয় নৌসেনার সাথে আরব সাগর, ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে লুকোচুরি খেলছিল পাক সাবমেরিন পিএনএস গাজি। ততকালীন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ডুবোজাহাজটি বিশাখাপত্তনমের কাছে বিস্ফোরণে ধংস হয়েছিল।  অন্যদিকে সোভিয়েত রণতরীর আগমন সংবাদে বঙ্গোপসাগরে ঢোকেনি মার্কিন নৌবহর।

১৯৭১ সালে  কিসিঞ্জারের প্রত্যক্ষ সমর্থন পেয়ে পাকিস্তান সরাসরি ভারতে হামলা করেছিল। এরপরই বাংলাদেশের গেরিলা বাহিনীর সমর্থনে পাক ভূখণ্ডে  ঢোকে ভারতের সেনা। ভয়াবহ সংঘর্ষে পাকিস্তানের পরাজয় ও বাংলাদেশের জন্ম হয়। কিসিঞ্জারের কূটনৈতিক-ষড়যন্ত্রী জীবনে সেটি সবথেকে কঠিন মুহূর্তে। হিমশীতল মাথার মানুষ কিসিঞ্জার বুঝেছিলেন ইন্দিরা বড় কঠিন ঠাঁই। তিনিই তাঁর শতবর্ষী জীবনে দেখে গিয়েছেন নব্বই দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন। শীতল যুদ্ধের শেষে সোভিয়েত পতন কিসিঞ্জারের কূটনৈতিক জীবনের অন্যতম সাফল্য।

Henry kissinger

ইন্দিরা হত্যার পর ভারতের রাজনীতিতে কুরেকুরে সেঁধিয়েছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। তাঁর কূটনৈতিক সাফল্যকে বন্ধুত্বের মর্যাদা দিয়েছিলেল বিজেপির শীর্ষ নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি। কূটনৈতিক মহলে জোরদার আলোচনা হয়, কিসিঞ্জারই আমেরিকায় মোদীর এন্ট্রি পাকা করেছিলেন।

শতবর্ষের জীবনে একাধিক সামরিক অভ্যুত্থানের গোপন নায়ক কিসিঞ্জার। ভিয়েতনাম, চিন, কিউবায় অসফল, আবার ইরান, চিলি,ভেনেজুয়েলাসহ বিভিন্ন দেশে সফল তিনি। সম্পূর্ণ পেশাদারি জীবন আরও ষড়যন্ত্রের নেশায় বুঁদ কিসিঞ্জার সম্পর্কে বলা হয় তার বাঁ হাত জানত না ডান হাত কী করতে চলেছে!