কলকাতা: রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার পরিষদে পাকিস্তানের উসকানিমূলক মন্তব্যের কড়া জবাব দিল ভারত৷ মঙ্গলবার ভারত সরাসরি প্রতিবেশী দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সন্ত্রাস রফতানির বিষয়টি তুলে ধরে। ভারতীয় প্রতিনিধি কূটনীতিক ক্ষিতিজ ত্যাগী একাধিক গুরুতর অভিযোগ তুলে ইসলামাবাদকে আন্তর্জাতিক মহলে রীতিমতো অস্বস্তির মুখে ফেলেন।
পাকিস্তান সেনার বিমান হামলা
ত্যাগীর বক্তব্যে উঠে আসে পাকিস্তান সেনার সাম্প্রতিক বিমান হামলার প্রসঙ্গ, যেখানে নিজেদের নাগরিকরাই হামলার শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, “যারা আমাদের ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে তাদের উচিত সেটি খালি করা। অর্থনীতি যখন লাইফ সাপোর্টে, রাজনীতি যখন সেনার দখলে, আর মানবাধিকার চিত্র যখন নিপীড়নের দাগে ভরা, তখন ভারতের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ না তুলে নিজেদের দিকে তাকানো উচিত।”
তিনি আরও যোগ করেন, “পাকিস্তান সন্ত্রাস রফতানি করে, রাষ্ট্রসংঘে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়, আর নিজের জনগণকেই বোমা মেরে হত্যা করে।”
এলএস-৬ বোমা নিক্ষেপ
ত্যাগীর এই কড়া প্রতিক্রিয়া আসে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার তিরাহ ভ্যালির মাতরে দারা গ্রামে বিমান হামলার প্রেক্ষিতে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান থেকে অন্তত আটটি এলএস-৬ বোমা ফেলা হয়। ডিডি নিউজের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ঘটনায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশু-ও রয়েছে। ভয়াবহ চিত্রে নিহতদের দেহ ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায় গ্রাম জুড়ে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানের এই অভ্যন্তরীণ সংকট নতুন নয়। আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনের পর ২০০১ সাল থেকেই সীমান্তবর্তী খাইবার ও সাবেক উপজাতি অঞ্চলে তালিবানি ঘাঁটি গড়ে ওঠে। ২০০৭ সালে তৈরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) গঠিত হওয়ার পর থেকেই সেনা ও সাধারণ মানুষ—উভয়েই জঙ্গি হামলার শিকার হতে থাকে। পাকিস্তান সেনা অপারেশন জার্ব-ই-আজব (২০১৪) এবং অপারেশন রদ্দ-উল-ফাসাদ (২০১৭)-এর মাধ্যমে সাফল্যের দাবি করলেও বাস্তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।
পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ পাক সেনা
বিবিসি-র ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় ফেরার পর টিটিপি আরও শক্তিশালী হয়েছে। খাইবার, বাজওর ও ওয়াজিরিস্তানে তাদের হামলা বেড়েছে। উইলসন সেন্টারের বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, সীমান্তবর্তী বহু জেলাতেই এখন উদ্যোগ হাতে রেখেছে জঙ্গিরা, আর পাকিস্তান সেনা ব্যাপক মোতায়েন করেও কার্যকরভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না।
রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার পরিষদে ভারতের এই তীব্র প্রতিক্রিয়া তাই শুধু কূটনৈতিক বার্তাই নয়, পাকিস্তানের অন্দর সংকটকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উন্মোচনও বটে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
