বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন বয়কট করবেন আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা- এমনই জানালেন দলের প্রধান ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সংবাদ সংস্থা রয়টার্স-কে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্টভাবে জানান, আওয়ামী লীগকে যদি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ রাখা হয়, তাহলে তাঁর দল ও সমর্থকেরা নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবেন।
ভারতের আশ্রয়ে হাসিনা
রয়টার্স জানিয়েছে, আপাতত শেখ হাসিনা ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন এবং নিকট ভবিষ্যতে দেশে ফেরার কোনও পরিকল্পনা নেই তাঁর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা বলেন, “বাংলাদেশের পরবর্তী সরকারের নির্বাচনী বৈধতা থাকা জরুরি। লক্ষ লক্ষ মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন। আপনি কার্যকরী রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এত মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে পারেন না।”
হাসিনা আরও জানান, তিনি সমর্থকদের অন্য কোনও দলকে ভোট দিতে বলবেন না। তবে তাঁর আশা, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে।
‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা অন্যায়’, অভিযোগ হাসিনার sheikh hasina warns of mass voter boycott
২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছিল। এর পরপরই অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। যুদ্ধাপরাধ ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির অভিযোগ তুলে মে মাসে আওয়ামী লীগের স্বীকৃতি বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, “আমার বিরুদ্ধে যে সব মামলা চলছে, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাকে আদালতে নিজের বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়নি।”
দেশে ফেরা নির্ভর করবে ‘বৈধ সরকারের অস্তিত্বে’
নিজের প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে হাসিনা জানান, “যত দিন বাংলাদেশে সাংবিধানিক সরকার, আইন ও শৃঙ্খলা বজায় থাকবে, তত দিন দেশে ফিরতে চাইব।” তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারে বা বিরোধী দলে থেকেও ভূমিকা রাখতে পারে, তবে সেই নেতৃত্ব তাঁর নিজের হাতে থাকা আবশ্যক নয়। হাসিনার কথায়, “একজন মানুষ বা একটি পরিবার দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না।”
প্রসঙ্গত, গত বছর তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় জানিয়েছিলেন, যদি পরিস্থিতি অনুকূলে আসে, তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের বিষয়টি তিনি বিবেচনা করতে পারেন।
ভারতে আশ্রয়ে শেখ হাসিনা, ফেরত চেয়ে ঢাকার অনুরোধ
২০২৪ সালের ৫ অগস্ট ‘জুলাই আন্দোলন’-এর জেরে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর তিনি বোন রেহানাকে নিয়ে ঢাকা থেকে বিমানে করে ভারতে আসেন। আপাতত উত্তরপ্রদেশের হিন্দন এয়ারবেসে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার অধীনে অবস্থান করছেন তিনি।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যেই তাঁর প্রত্যর্পণ দাবি জানিয়ে ভারতের কাছে কূটনৈতিক নোট (নোট ভারবাল) পাঠিয়েছে। ভারত সরকার নোটটি গ্রহণ করলেও, এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়নি।


