ঢাকা: বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী মুখ, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিএনপি সভানেত্রী খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। গত কয়েক দিন ধরেই নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। রাখা হয়েছে CCU-তে। তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে রাজনৈতিক মহল জুড়ে—বিশেষত ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে লড়বেন বলে ঘোষণার পর।
দীর্ঘদিন ধরে জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। বিএনপি সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত রবিবার রাতেই বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন তিনি। চিকিৎসায় দেখা যায়, তাঁর বুকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে। নতুন করে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে একাধিক বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম। হার্টে স্টেন্ট, বুকে পেসমেকার—সব মিলিয়ে তাঁর কার্ডিয়াক অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। পাশাপাশি লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিস, আর্থরাইটিস ও দৃষ্টিশক্তির জটিলতাও বাড়তি উদ্বেগ সৃষ্টি করছে চিকিৎসকদের মধ্যে।
হাসপাতালে ইতিমধ্যেই গঠিত হয়েছে একটি বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ড। দেশের চিকিৎসকদের পাশাপাশি বিদেশি কার্ডিয়াক ও পালমোনারি বিশেষজ্ঞরাও যুক্ত হয়েছেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায়। বিএনপি–র মিডিয়া সেলের সদস্য সাইরুল কবীর খান জানিয়েছেন, “খালেদা জিয়ার চিকিৎসা মূলত হার্ট ও ফুসফুসকেন্দ্রিক। পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় বিশেষজ্ঞ দল ২৪ ঘণ্টাই পর্যবেক্ষণে রেখেছে।”
উদ্বেগ বিএনপি-তে Khaleda Zia Critical in CCU
খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় দেশের সাধারণ মানুষকে প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজে তাঁর সুস্থতা কামনায় দোয়া করতে অনুরোধ করা হয়েছে দলের তরফে।
রাজনৈতিক দিক থেকেও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আগামী নির্বাচনে বিএনপি–কেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে। আর জামায়াত ইসলাম থেকে দূরত্ব বজায় রেখে মূল বিরোধী শক্তি হিসেবে বিএনপি–র উত্থানেও খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব ছিল প্রতীকী ও বাস্তব—দু’ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লিগকে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না—এমন রাজনৈতিক পরিবেশে খালেদার অবস্থান আরও কেন্দ্রীয় হয়ে উঠেছিল।
লন্ডনের হাসপাতালে ছিলেন প্রায় চার মাস
উল্লেখ্য, চলতি বছরের প্রথম দিকে লন্ডনে প্রায় চার মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। মে মাসে দেশে ফেরার পর থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি শুরু হয় বলে পারিবারিক সূত্রের দাবি। বড় ছেলে তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরেই লন্ডনে থাকেন। ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের মৃত্যুতে ব্যক্তিগত শোকও এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি।
খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি তাঁকে নির্বাচনী লড়াইয়ে আদৌ অংশগ্রহণ করতে দেবে কি না—এখন সেই প্রশ্নই তীব্রতর হচ্ছে বাংলাদেশজুড়ে। চিকিৎসা, রাজনীতি, জনমত—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি দ্রুতই জটিল হয়ে উঠছে।
