ভাগাড়ের পাশে পড়ে ছিল এক জীর্ণ দেহ। ক্ষুধায় কাতর এক বৃদ্ধ শেষ আশ্রয় খুঁজেছিলেন খাবারের উচ্ছিষ্টে। কিন্তু ভাগাড়েও কিছু না পেয়ে সেখানেই প্রাণ হারালেন তিনি।
স্থানীয়দের চোখে ধরা পড়ে করুণ দৃশ্যটি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। মৃত ব্যক্তির নাম আবদুল রহিম (৬০), বাড়ি সৈয়দপুর এলাকায়। ঘটনা বাংলাদেশের (Bangladesh) দিনাজপুরের হিলি উপশহরের চুড়িপট্টি এলাকায়। শুক্রবার দুপুরে মরদেহটি উদ্ধার করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য।
পুলিশের ওসি নাজমুল হক জানিয়েছেন, ‘‘স্থানীয়দের খবর পেয়ে আমরা মরদেহ উদ্ধার করি। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে—অনাহার ও অপুষ্টির কারণেই এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।’’
ছবিতে ক্ষুধার নির্মম ছবি
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়—বড় চুল, অগোছালো দাড়ি, ছেঁড়া কাপড়ে এক কঙ্কালসার দেহ পড়ে আছে মাটিতে। চারপাশে ছড়ানো ময়লা, প্লাস্টিক, শুকনো পাতা আর খাবারের মোড়ক। যেন মানুষ নয়, সমাজের ফেলে দেওয়া এক অবহেলিত দেহ।
এই দৃশ্য দেখে অনেকেই শিউরে উঠেছেন। নেটিজেনরা লিখেছেন—“এ কোন বাংলার ছবি? আমরা কি সত্যিই এগোচ্ছি, নাকি ফিরে যাচ্ছি ইতিহাসের অন্ধকারে?”
মন্বন্তরের ভয়াল স্মৃতি
এই ছবি মনে করিয়ে দেয় বাংলার (Bangladesh) ভয়াবহ মন্বন্তরের কথা। ১৭৭০ সালে দুর্ভিক্ষে প্রায় এক কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। মানুষ খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়াত রাস্তা, খাল, বিল, এমনকি মৃতদেহের উপরও। ২৫৫ বছর আগের সেই ইতিহাস যেন আজও আমাদের তাড়া করছে।
২০২৫ সালে, স্বাধীনতার এত বছর পরও, যখন আমরা প্রযুক্তির অগ্রগতির কথা বলি, তখন ভাগাড়ের পাশে এক বৃদ্ধের ক্ষুধামৃত্যু আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে—দারিদ্র্য ও অনাহার এখনো আমাদের সমাজে বড় অভিশাপ।
মানুষের ক্ষোভ ও প্রশ্ন
সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন প্রশ্ন—যে দেশে কোটি কোটি টাকা খরচ হয় উৎসব, সড়ক বা অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে, সেই দেশে কি একজন বৃদ্ধকে খাবারের জন্য ভাগাড়ে মরতে হবে?
মানুষ বলছে, এটি কেবল একটি মৃত্যু নয়, এটি রাষ্ট্র ও সমাজের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।