Bangladesh: বর্ধমানের আব্দুল সওদাগরের রেসিপি ‘বেলা বিস্কুট’ ২৫০ বছরের ভালোবাসা

চাঁদ সওদাগরের দেশে ছিল এক আব্দুল সওদাগর। বাংলার ঘরে ঘরে সে ঢুকেছিল বিস্কুটের ঝুলি নিয়ে।তখন মোঘল আমল। বর্ধমান থেকে বিস্কুট রেসিপি নিয়ে সুদূর চট্টগ্রামে গেছিলেন…

চাঁদ সওদাগরের দেশে ছিল এক আব্দুল সওদাগর। বাংলার ঘরে ঘরে সে ঢুকেছিল বিস্কুটের ঝুলি নিয়ে।তখন মোঘল আমল। বর্ধমান থেকে বিস্কুট রেসিপি নিয়ে সুদূর চট্টগ্রামে গেছিলেন আব্দুল গনি সওদাগর। সে এক দুরন্ত কথা। আজও বর্ধমানের সেই বিস্কুট রেসিপি সাত সকালে মন ভোলানো স্বাদের সূচনা। শারদ উৎসবের বঙ্গ রসনায় থাকল অনবদ্য বেলা বিস্কুটের কথা। আড়াইশ বছরের বাঙালি বিস্কুট ব্যবসার ইতিহাস শোনালেন ডল চক্রবর্তী।

বেলা বিস্কুট খেয়েই কেটেছে পূর্ব বাংলা থেকে আসা ছিন্নমূল অনেকের শৈশব,যৌবন। আর বাংলাদেশে বিশেষ করে চট্টগ্রামে তো বেলা বিস্কুটের নামটাই একটা ভালোবাসা। এই বিস্কুট শক্ত হওয়ার কারণে কুটুর মুটুর কামড় দিয়ে চায়ের কাপে ডুবিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা। একসময় চায়ের দোকানে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপের সঙ্গে এই বিস্কুটের চাহিদা ছিল প্রচুর। এখনও আছে।

অনেকের আবার সকালের কিংবা বিকেলের চায়ের সঙ্গে এই বিস্কুট না হলে জমতই না। অথচ কালের বিবর্তনে এটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। মানুষের রুচির সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন ঘটেছে চাহিদার। আবার এই বিস্কুটের আকৃতিতে পরিবর্তন এসেছে, দামও বেড়েছে অনেকটাই। আকারে কিছুটা গোলাকৃতি এই বেলা বিস্কুটের পরিচিতি আজও বন্দর নগরে চট্টগ্রামের সর্বজনীন।

আজ থেকে কমপক্ষে ২০০ বছর আগে এই বিস্কুট উৎপাদন শুরু হয় চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের চন্দনপুরা কলেজ রোডে ঐতিহ্যবাহী গোনি বেকারীর শপিং কর্নার নামে দোকানটিতে পাওয়া যায় এই প্রসিদ্ধ বিস্কুট।খ্যাতির কারণে এখন ওই এলাকাটির নাম গনি বেকারি রোড। মোঘল আমলে বর্ধমান থেকে এই বেকারি শিল্প নিয়ে  চট্টগ্রামে গেছিলেন আব্দুল গনি সওদাগর। তিনি পর্তুগিজদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম এই বিস্কুটের প্রচলন ঘটান। তবে আব্দুল গনির পূর্বপুরুষ লাল খাঁ সুবেদার ও তার ছেলে কানু খাঁ মিস্ত্রির হাত ধরে বেকারি পণ্য তৈরির সূচনা হয় এই অঞ্চলে। এমন তথ্যই মিলেছে গবেষকদের লেখায়।

বেলা বিস্কুটের নাম আসে প্রথম গোনি বেকারি থেকে যার নাম শুনলেই জিভে জল আসে। মূলত ১৮৭৮ সাল থেকে এই বেকারির যাত্রা শুরু হয়। কখন এই বেলা বিস্কুট তৈরি হয় তার সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। সেই সময় বেলা বিস্কুট তৈরি হতো বেকারির ভেতরে একটি বিশাল চুল্লিতে। যার টিন মাটি ও ইটের তৈরি। একে বলা হয় বিস্কুটের তন্দুর। জানা যায় একমাত্র তন্দুরে বানালেই বেলা বিস্কুটের গুণগতমান ও স্বাদ ভালো হয়।  বর্তমানে তন্দুর অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই সময় গনি বেকারি থেকে ব্রিটিশদের জন্য বেকারি খাদ্য দ্রব্য তৈরি হত। ১৯৩৯ সালের দিকে চট্টগ্রাম নগরীতে বেকারি শিল্পের বিকল্প ঘটে। বেকারি শিল্পী সংখ্যা বেড়েছে এবং বেকারী শিল্প বেড়ে চলে। ভূ কোম্পানি বিস্কুট তৈরি করে আসছে তবে গনি কোম্পানি আজও এই বিস্কুট তৈরির প্রধান সাক্ষী।

এখন তন্দুরের বদলে আধুনিক বেকারিতে স্থাপন হয়েছে বৈদ্যুতিক ডিজিটাল ওভেন। আবার অনেকে আদি ঐতিহ্য বেলা বিস্কুটের গুণগতমান ধরে রাখার জন্য আজও তন্দুরিতে বিস্কুট তৈরি করে। বেলা বিস্কুটের জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নয় সমগ্র জেলা এবং বিশ্বের মানুষের কাছে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। বেলা বিস্কুট আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, লন্ডন সহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় বরং যারা প্রবাসী তারা দেশ থেকে ফিরে যাওয়ার সময় বিস্কুট সঙ্গে করে নিয়ে যায়।