Bangladesh: ‘জাতীয় কবি’ কাজী নজরুল ইসলামের স্বীকৃতি নেই সরকারি গেজেটে, সুপ্রিম নোটিশে শোরগোল

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের (Bangladesh) জাতীয় কবি। কিন্তু এই মর্যাদার কোনও গেজেটভুক্ত বয়ান নেই। এমনটা জেনে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা নোটিশ পাঠালেন সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিতে।…

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের (Bangladesh) জাতীয় কবি। কিন্তু এই মর্যাদার কোনও গেজেটভুক্ত বয়ান নেই। এমনটা জেনে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা নোটিশ পাঠালেন সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিতে। নোটিশে বলা হয়েছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করে কবি নজরুলকে জাতীয় কবির লিখিত তকমা দিতে হবে।

মৌখিক নয় লিখিতভাবে নথিভুক্ত থাকুক কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদা দানের বিষয়টি। এমনই অবস্থান বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদেরও।

   

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মহম্মদ আসাদউদ্দিন সহ ১০ জন আইনজীবী একযোগে মঙ্গলবার এই নোটিশ পাঠান। নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের অনুরোধ জানান তাঁরা।

আইনজীবী মহ. আসাদউদ্দিন বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম মৌখিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে পরিচিত হলেও লিখিতভাবে এর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। বলা হয়ে থাকে, ১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতার আলবার্ট হলে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সর্বভারতীয় বাঙালিদের পক্ষ থেকে কবিকে জাতীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক সহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেই কাজী নজরুলকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে মুখে মুখে তিনি জাতীয় কবি হয়ে আছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকারিভাবে তাঁকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করে কোন়ো প্রজ্ঞাপন বা গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কোনো মৌখিক বিষয় নয়।

আইনজীবী আসাদউদ্দিন আরও বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে ভারত থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সঙ্গে বাংলাদেশে আনা হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের তরফে তাঁর বসবাসের জন্য ঢাকার ধানমণ্ডিতে একটি বাড়ি দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালে কবির বাংলাদেশি নাগরিকত্ব দিয়ে সরকারি আদেশ জারি করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ‘একুশে পদক’ দেওয়া হয়। সবকিছুরই ছবি, তথ্যসহ লিখিত দলিল আছে। কিন্তু নির্মম সত্য এটিই যে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামের সরকারি ঘোষণার কোনও লিখিত দলিল বা প্রমাণ নেই।

আইনজীবীরা বলেছেন, বাংলাদেশের দুটি আইনে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি আয়োজনে তাঁকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে উল্লেখও করা হয়। কিন্তু, সবই পরোক্ষ স্বীকৃতি। জাতীয় কবির স্বীকৃতি কখনও অলিখিত থাকতে পারে না। অলিখিত ইতিহাস ও তথ্য সময়ের বিবর্তনে বিলীন হয়ে যায়। কবি নজরুলকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে সরকারি ঘোষণার জন্য কবি পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার দাবি তোলা হয়েছে। নজরুল গবেষক এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকেও অনেক দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু, অদ্যবধি এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই এমন আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

আইনজীবীরা জানান, নোটিশ মানা না হলে আরও বড় আইনি লড়াই হবে।