লাইব্রেরিতে বাধ্যতামূলক মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বই, প্রতি স্কুলে ১ লক্ষ টাকা রাজ্যের

পশ্চিমবঙ্গের স্কুলগুলির লাইব্রেরি ব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার একটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এবার থেকে রাজ্যের প্রতিটি স্কুলের লাইব্রেরিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata…

West Bengal Mandates Mamata Banerjee Books in School Libraries with ₹1 Lakh Grant

পশ্চিমবঙ্গের স্কুলগুলির লাইব্রেরি ব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার একটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এবার থেকে রাজ্যের প্রতিটি স্কুলের লাইব্রেরিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) লেখা বই রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য রাজ্য সরকার প্রতিটি স্কুলকে লাইব্রেরি গ্রান্ট হিসেবে ১ লক্ষ টাকা করে অনুদান প্রদান করছে। এই অর্থ ব্যবহার করে স্কুলগুলিকে নির্দিষ্ট বইয়ের সেট ক্রয় করতে হবে, যার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বইগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

Read Hindi: स्कूल पुस्तकालयों में मुख्यमंत्री की लिखी किताबें अनिवार्य, प्रत्येक स्कूल को 1 लाख रुपये का अनुदान

   

রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, লাইব্রেরির জন্য বই ক্রয়ের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকায় পাঁচটি ভিন্ন সেটের বই রয়েছে, যেগুলির মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ১৮ থেকে ১৯টি বই অন্তর্ভুক্ত। এই বইগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—দুয়ারে সরকার, শিশু মন, কলম, আমাদের সংবিধান ও কিছু কথা, কলকাতার দুর্গা উৎসব, জাগরণের বাংলা, এবং আমি। এই বইগুলি মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক দর্শন, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত চিন্তাভাবনা এবং রাজ্যের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বিবরণ তুলে ধরে।

রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হল, শিক্ষার্থীদের মধ্যে পঠন সংস্কৃতি গড়ে তোলা এবং তাদের রাজ্যের শাসনব্যবস্থা, সংস্কৃতি ও সরকারি উদ্যোগ সম্পর্কে গভীর ধারণা দেওয়া। তবে, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষাবিদদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা রাজ্যের নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সরকারি প্রকল্পগুলি সম্পর্কে জানতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, দুয়ারে সরকার বইটি রাজ্যের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের বিস্তারিত বিবরণ দেয়, যা শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে।

অন্যদিকে, কিছু শিক্ষাবিদ ও সমালোচক এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তাঁদের মতে, লাইব্রেরিতে বই নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরও বৈচিত্র্য থাকা উচিত ছিল। শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির লেখা বইয়ের উপর এতটা জোর দেওয়া শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি সীমিত করতে পারে। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, বিশ্বসাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস বা অন্যান্য বিষয়ের বইয়ের পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রীর বইয়ের উপর এতটা গুরুত্ব দেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত।

Advertisements

রাজ্যের নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, বইগুলি কোন কোন প্রকাশনা সংস্থা থেকে কিনতে হবে, তাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এই প্রকাশকদের মধ্যে রয়েছে কিছু নামকরা সংস্থা, যারা মুখ্যমন্ত্রীর বই প্রকাশ করে। এই নিয়মের ফলে ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় থাকবে বলে সরকারের দাবি। তবে, কিছু শিক্ষক ও স্কুল কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, নির্দিষ্ট প্রকাশকদের থেকে বই কেনার বাধ্যবাধকতা স্কুলের স্বাধীনতাকে কিছুটা সীমাবদ্ধ করছে।

অনুদানের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও বিস্তারিত নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি স্কুলকে ১ লক্ষ টাকার মধ্যে বই ক্রয় করতে হবে এবং অবশিষ্ট অর্থ লাইব্রেরির অন্যান্য প্রয়োজনে, যেমন—শেলফ, আলমারি বা পড়ার টেবিল কেনার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এই অর্থের হিসাব রাখতে হবে এবং শিক্ষা দপ্তরে জমা দিতে হবে।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে রাজ্য সরকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে পঠন সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চায়। তবে, এর বাস্তবায়ন কতটা সফল হবে এবং শিক্ষার্থীদের উপর এর প্রভাব কী হবে, তা সময়ই বলবে।