ভোটার তালিকায় কারচুপি, চার আধিকারিককে সাসপেন্ড করল নবান্ন

West Bengal Government Seeks Report on Delayed Banglar Bari Projects

ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগে বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচনী কাজের সঙ্গে যুক্ত চার আধিকারিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সূত্রের খবর, তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের না হলেও বিভাগীয় তদন্ত চলবে। একই সঙ্গে ডেটা এন্ট্রি প্রক্রিয়ায় যুক্ত আরও দুই কর্মীকে কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের (Commission) চাপের মুখেই শেষমেশ এই ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে নবান্ন।

Advertisements

ঘটনার সূত্রপাত প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। জানা গিয়েছে, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলাকালীন ময়না এবং বারুইপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার অফিসারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ অনুযায়ী, ওই অফিসাররা নিয়মবিরুদ্ধভাবে নিজেদের লগইন ব্যবহার না করে ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের দিয়ে কাজ করাতেন। এই বিষয়টি জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নজরে আসে। অভিযোগটি যথেষ্ট গুরুতর বিবেচনা করে কমিশন নির্দেশ দেয় যে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করতে হবে।

   

গত ৮ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে কমিশনের এই নির্দেশে আপত্তি জানান। তিনি অভিযোগ তোলেন, কমিশন অযথা ‘অতিসক্রিয়তা’ দেখাচ্ছে এবং রাজ্যের কোনও অফিসারকে এভাবে শাস্তি পেতে দেবেন না। এর পরেও কেন্দ্রীয় কমিশন তার অবস্থান থেকে সরেনি।

পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠলে মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি কমিশনের আধিকারিকদের কাছে অনুরোধ করেন কিছুটা সময় দেওয়ার জন্য। কমিশন ২১ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়। সেই সময়সীমার শেষদিনেই নবান্ন পদক্ষেপ করল। রাজ্যের তরফে চার অফিসারকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে এবং বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনকেও জানানো হয়েছে।

যদিও এফআইআর দায়ের করা হয়নি, তবুও অভিযুক্ত অফিসারদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হবে বলে সরকারি সূত্রে খবর। পাশাপাশি দুই ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকেও কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে মোট ছ’জন কর্মী আপাতত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজ থেকে বাদ পড়লেন।

Advertisements

রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনাকে ঘিরে তীব্র আলোড়ন শুরু হয়েছে। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে, রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজকেই প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। তাঁদের দাবি, এই দুর্নীতির শিকড় অনেক গভীরে, যা শুধু কয়েকজন অফিসারের দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় সীমাবদ্ধ নয়। তাঁদের মতে, স্বচ্ছ ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কঠোর অবস্থান ন্যায্য এবং রাজ্যের পক্ষপাতমূলক মনোভাব বরদাস্ত করা উচিত নয়।

অন্যদিকে, শাসক শিবিরের বক্তব্য, কমিশন রাজনৈতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করছে। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি অন্যায়ভাবে কোনও আধিকারিককে শাস্তি দিতে রাজি নন। তবে শেষমেশ কমিশনের নির্দেশ মানতেই হয়েছে রাজ্য প্রশাসনকে।

ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজকে কেন্দ্র করে যে এত বড় বিতর্ক তৈরি হল, তা নিঃসন্দেহে রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করবে। এখন দেখার বিষয়, বিভাগীয় তদন্তের ফল কী দাঁড়ায় এবং কমিশন ভবিষ্যতে আর কোনও কঠোর পদক্ষেপ নেয় কি না।