কলকাতা, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গে বাল্যবিবাহের হার এখনো কমতে পারেনি, যা রাজ্যের শিক্ষিত সমাজের জন্য একটি বড় প্রশ্ন চিহ্ন তুলে ধরেছে। সাম্প্রতিক রিপোর্ট (SRS ২০২৩) অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গে মেয়ে শিশু বিবাহের হার ৬.৩% রেকর্ড করা গেছে, যা জাতীয় গড় ২.১% এর তিন গুণেরও বেশি। এই হার ঝাড়খণ্ড (৪.৬%), ছত্তিশগড় (৩.০%) এবং বিহার (২.৬%) এর মতো রাজ্যের তুলনায়ও উচ্চতর। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, পশ্চিমবঙ্গের সাক্ষরতা হার (২০১১ সেন্সাস অনুযায়ী ৭৭.০৮%) যথেষ্ট উচ্চ, তবুও বাল্যবিবাহের এই অবস্থা রাজ্যের জনগণের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।
রাজ্য সরকারের গর্বিত প্রকল্প কন্যাশ্রী প্রকল্প (Kanyashree Scheme), যা ২০১৩ সালে শুরু হয়ে ৮১ লক্ষ মেয়েকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে, বাল্যবিবাহ রোধে যথেষ্ট কার্যকর হতে পারেনি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া এবং বিয়ে বিলম্ব করার জন্য মেয়েদের নগদ টাকা দেওয়া হয়, তবে গ্রামীণ অঞ্চলে এর প্রভাব সীমিত। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য জরিপ-৫ (২০১৯-২০) অনুযায়ী, রাজ্যে ২০-২৪ বছর বয়সী মহিলাদের ৪১.৬% কম বয়সে বিয়ে হয়েছে, যেখানে মুরশিদাবাদ জেলায় এই হার ৫৫.৪% পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন সমাজসেবী সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
বাল্যবিবাহের এই উচ্চ হারের পেছনে সমাজের গভীর প্রথা ও অর্থনৈতিক দুরবস্থা একটি বড় কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। গ্রামীণ অঞ্চলে বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা এবং স্বাধীনতা নিয়ে পিতৃতান্ত্রিক চিন্তাধারা এখনো প্রবল। এছাড়া, কিছু জেলায় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের কথাও উঠে এসেছে, যেমন মুরশিদাবাদে বেশ কিছু সম্প্রদায়ে বিয়ের বয়স নিয়ে কঠোর নিয়ম নেই। তবে, এই বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য গবেষণা এখনো ধর্মের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক নির্দেষ্ট করেনি।
সামাজিক কর্মীরা জানাচ্ছেন, কন্যাশ্রী প্রকল্পের মতো উদ্যোগ গ্রহণযোগ্য হলেও এটি গ্রামীণ অঞ্চলের গভীর সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হচ্ছে। তাদের মতে, শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তা দেওয়া দিয়ে কাজ হবে না; এর সঙ্গে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় উন্নতি আনা প্রয়োজন। UNICEF ভারতের ২০২৪ সালের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মেয়েদের শিক্ষা বাড়ানো এবং কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ কমানো সম্ভব, তবে এর জন্য সরকারি ও সামাজিক উদ্যোগ একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বিষয় নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। কিছু ব্যবহারকারী মনে করছেন, রাজ্যের প্রশাসনিক অক্ষমতা এবং ঘুমন্ত ভোটারদের কারণে এই সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। তবে, সরকারি নির্দেশনায় কন্যাশ্রী প্রকল্পের পরিধি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে, যা বাল্যবিবাহ রোধে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে পারে। তবে, এই পরিকল্পনার সফলতা নির্ভর করবে কতটা গভীরভাবে গ্রামীণ সমাজে এটি প্রয়োগ করা যায়।
রাজ্যের জনগণ এখন সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছে। বাল্যবিবাহের মতো সমস্যা সমাধান না হলে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের পথে এটি একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।