সালকিয়ায় তরুণীর মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা, কী বললেন হাওড়া মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের প্রশাসক?

বৃহস্পতিবার রাতে হাওড়ার (Howrah) সালকিয়ায় (Salkia) তাঁর বাড়ি থেকে কয়েক মিটার দূরে হাটু জল দিয়ে যাতায়াত করা কালীন প্রাণ হারান এক যুবতী। পূরবী দাস নাম…

Salkia Waterlogging সালকিয়ায় তরুণীর মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা, কী বললেন হাওড়া মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের প্রশাসক?

বৃহস্পতিবার রাতে হাওড়ার (Howrah) সালকিয়ায় (Salkia) তাঁর বাড়ি থেকে কয়েক মিটার দূরে হাটু জল দিয়ে যাতায়াত করা কালীন প্রাণ হারান এক যুবতী। পূরবী দাস নাম ২২ বছর বয়সের ওই যুবতী একটি লোহার শাটারে হেলান দিয়েছিলেন বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। হেলান দেওয়ার পরেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনি। সেদিন তাঁর ছোট বোনের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন পূরবী। হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিক জানিয়েছেন যে লোহার শাটারের সংস্পর্শে আসা একটি তারের কারণেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন পূরবী। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

কয়েকদিন ধরেই ভৈরব ঘটক লেন জলমগ্ন রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এসপ্ল্যানেড থেকে ৬ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত সালকিয়া (Salkia)। উত্তর কলকাতার আহিরীটোলা থেকে নদীর ওপারে হুগলির পশ্চিম তীরে অবস্থিত এই শহর। হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিক জানিয়েছেন যে লোহার শাটারের সংস্পর্শে আসা একটি তারের কারণেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন পূরবী। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে পুলিশ। পূরবীর শোকাহত বাবা বলেন, তিনি মেয়েকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে দেখেন কিন্তু কিছু করতে পারেননি। পেশায় তিনি একজন ইলেকট্রিশিয়ান যিনি একটি ইলেকট্রিকাল যন্ত্রাংশের দোকানও চালান।

   

পূরবীর বাবা তারক দাস বলেন, “আমি আমার দোকানে ছিলাম যখন আমি আমার মেয়ের চিৎকার শুনি। সে আমার দোকানের ঠিক বিপরীতে একটি নির্মাণাধীন ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত একটি দোকানের লোহার শাটারের সংস্পর্শে এসেছিল। আমি তাকে সাহায্য করার জন্য ছুটে গেলাম কিন্তু যে মুহূর্তে আমি তাকে স্পর্শ করলাম, আমি একটি বিশাল ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম। আমি চিৎকার করে এমসিবি বন্ধ করার অনুরোধ করি । দোকান মালিক সেটি বন্ধ করে দেন। তারপর আমি আমার মেয়েকে ওঠানোর চেষ্টা করি। সে জলে পড়েছিল।”

 

Gold Silver Price: সপ্তাহের শেষে সোনার দামে বিরাট পরিবর্তন, জানেন কলকাতার রেট?

সাহিল সাউ যিনি একবার পূরবীর মতো একই কোচিং সেন্টারে পড়াশোনা করেছিলেন এবং একই বিল্ডিংয়ে থাকেন যার একটি অংশ বর্তমানে নির্মাণাধীন বলেছে, “পূরবীকে আহত অবস্থায় তাঁর বাড়ির পাশের একটি সেলুনে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তাঁর পরিবার এবং প্রতিবেশীরা তাঁর পুনরুজ্জীবিত করার জন্য তাঁর হাতের তালু এবং পা ঘষে। “তিনি কয়েকবার হাঁফ ছাড়ছিলেন কিন্তু পরে নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।”

পূরবীকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয়। তাঁর প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন যে তিনি সল্টলেকের একটি ইনস্টিটিউট থেকে বিজ্ঞানে মাস্টার্স করছিলেন। পূরবী তার বাবা-মা এবং বোনের সঙ্গে থাকতেন। তাঁর বোন স্কুলে পড়ে। আশেপাশের অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে বর্ষা এবং তার পরেও কিছু মাস ধরে রাস্তাগুলি হাঁটু পর্যন্ত জলে জমে থাকছে, কিন্তু রাজ্য সরকার তাঁদের দুর্ভোগের প্রতি কোন কর্ণপাত করেনি।

শুক্রবার স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যম এলাকাটি পরিদর্শন করে দেখিয়েছে যে বাসিন্দারা নোংরা জলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এবং তাতে তাঁরা অভ্যস্ত। বেশিরভাগেরই তাঁদের বাড়ির সামনে পা রাখার জন্য ইট বিছিয়ে রেখেছিলেন যাতে তাঁদের জুতোগুলি বাইরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ড্রেনের জলে ভিজে না যায়। কিন্তু কয়েক ধাপ পরে, অধিকাংশই জমা জলের সম্মুখীন হন। জমা জলে ময়লা আবর্জনা সহ খোলা ভ্যাট, জলের নীচে নিমজ্জিত খোলা ম্যানহোল এবং খোলা উঁচু ড্রেনগুলি দেখা গেছে এলাকায়।

বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাস্থলে যান সিইএসসির আধিকারিকরা। একজন সি ইএসসি মুখপাত্র বলেছেন, “আমাদের আধিকারিকদের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে একটি নির্মাণাধীন ভবনের একটি লাইভ তার একটি লোহার শাটারের সংস্পর্শে এসেছিল। শাটার বা তারের সংস্পর্শে আসার পরে ভুক্তভোগী সম্ভবত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিলেন।”

ওই আধিকারিক বলেছেন যে সিইএসসি তাদের অনুসন্ধানের রিপোর্ট করে মালিপঞ্চঘোড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে।

সমীর পাল নামে এক প্রতিবেশী বলেন, “পূরবীর মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। আরও দুর্ভাগ্যের বিষয় হল যে এতগুলি পরিবার এখানে বসবাস করছে তা প্রশাসনের নজরে আনার জন্য পুরবীকে মরতে হয়েছিল।”

আবহাওয়া দফতর অনুসারে হাওড়ায় বৃহস্পতিবার সকাল ৮:৩০ টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮: ৩০ টার মধ্যে ৪৫ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। দপ্তরের গণনা অনুসারে এটি “ভারী বৃষ্টিপাতের” মতন নয়।এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাজ্য প্রশাসন তাঁদের অভিযো গে কর্ণপাত করছে না ।নির্বাচিত হাওড়া মিউনিসিপ্যাল ​​কর্পোরেশনের অভাবকে অনেকেই এই উদাসীনতার জন্য দায়ী করেছেন।রাজ্য সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন যে শেষ নির্বাচিত নাগরিক বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে ডিসেম্বর ২০১৮ এ। এরপর থেকে আর কোনও নির্বাচন হয়নি।

হাওড়া মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেছেন, “আমরা সেখানে ড্রেনেজ উন্নত করার জন্য কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য দুই বা তিন ঘণ্টার মধ্যে জলের নিষ্কাশন করা। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সেখানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।” বাসিন্দারা তাঁর বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন এবং বলেছেন যে বৃষ্টি কমে যাওয়ার পরেও কয়েক দিন ধরে জলাবদ্ধতা অব্যাহত রয়েছে। হাওড়া মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের প্রাথমিক প্রাক-বর্ষা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেনি এমন অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, সুজয় বলেন, “লোকসভা নির্বাচনের জন্য আদর্শ আচরণবিধির কারণে আমরা শুরু করতে দেরি করেছিলাম।”

লোকসভার ফলাফল ঘোষণা করা হয় ৪ জুন প্রকাশিত হয়েছিল৷ ২১ জুন রাজ্যে আসে বর্ষা । বর্ষার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে কোনো মডেল কোড নিষেধাজ্ঞা নেই বলে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।