কেন্দ্র-রাজ্যের সংঘাতের নয়া কেন্দ্র এবার অর্নব দাম। প্রাক্তণ এই মাওবাদী নেতার পিএইচডি করা নিয়ে নয়া দ্বন্দ শুরু হল। অর্নবের পিএইচ ডি করা নিয়ে অকারণে জটিলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে। অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্র অনবরত অর্নবকে বাধা দিচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।
যারফলে পিএইচডির ইন্টারভিউয়ে প্রথম হয়েও গবেষণা করতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাঁকে। আর এবার সেই ইস্যুতেই উপাচার্যের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ হেনেছে তৃণমূল। মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেন, পরীক্ষায় ভাল ফল করা সত্ত্বেও অর্ণবকে পিএইচডি করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বাধা দিচ্ছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বয়ং গৌতম চন্দ্র। বৃহস্পতিবার নিজের এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে কুণাল লিখেছেন,‘‘মাওবাদী অভিযোগে বন্দি অর্ণব দামকে পিএইচডি করতে দিতে হবে। ও যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। উপাচার্য অকারণ জট তৈরি করে বাধা দিচ্ছেন।’’
এই মুহূর্তে হুগলির সেন্ট্রাল জেলে বন্দি অর্নব। প্রয়োজনে তাঁকে বর্ধমান জেলেও নিয়ে আসা হতে পারে বলে চিন্তা ভাবনা চলছে। এই বিষয়ে জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথাবার্তাও চালাচ্ছেন রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি। এছাড়াও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের বিভাগীয় প্রধান তনভীর নসরীনের সঙ্গেও কথা হয়েছে তাঁর। অর্নবকে সম্পূর্ণ সাহায্য করতে চাইছেন তিনি। কিন্তু বাধ সাধছেন উপাচার্য গৌতম চন্দ্র। আর এই নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতে জড়াল রাজ্যপাল নিয়োজিত উপাচার্য। বর্তমানে রাজ্যের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে সংঘাত চলছে রাজভবনের। তার প্রেক্ষিতে অর্নবের পিএইচডি ইস্যু এখন দুই পক্ষের সংঘাতের একটি নতুন মঞ্চ গড়ে দিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
অতীতে, মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত হওয়ার আগে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন অর্নব। কলকাতার গড়িয়ার বাসিন্দা তিনি। বাবা এসকে দাম অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। উচ্চমাধ্যমিকের পর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশুনা করতে ভর্তি হন খড়গপুর আইআইটিতে। সেখানে পড়াকালীন হঠাত্ বেপাত্তা হয়ে যান তিনি। পরে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে নিষিদ্ধ মাওবাদী সংগঠনে যোগ দেন তিনি। তারপর একের পর এক ‘দেশ বিরোধী’ কার্যকলাপে যুক্ত হয়ে পড়েন।
লালগড় আন্দোলনের সময় অযোধ্যা-বাঘমুন্ডি পাহাড়ে ডেরা বাঁধেন তিনি। পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে ‘একে-৪৭’ নিয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন অর্নব। সেই সুবাদেই যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা বাড়ে কুখ্যাত মাওবাদী নেতা কিষেনজির সঙ্গে। শুরু হয় একের পর এক চক্রান্তের ‘গোপন প্ল্যান’। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১২ সালে ঝাড়গ্রামের শিলদায় আধাসামরিক বাহিনীর ক্যাম্পে দলবল নিয়ে হামলা চালান তিনি। সেনার সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে আহত হলে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। তারপরই আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন সাজা হয় তাঁর।