‘মেয়েকে আর ফিরে পাবো না, তবে ওদের ফাঁসি দিক আদালত’

নিজস্ব সংবাদদাতা, বনগাঁ: ঘড়িতে ঠিক দুপুর ১ টা। আদালত চত্বরে তিল ধরানোর জো নেই। গোটা গ্রাম যেন উঠে এসেছে আদালতের দরজায়। বাইরে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা একটাই,…

নিজস্ব সংবাদদাতা, বনগাঁ: ঘড়িতে ঠিক দুপুর ১ টা। আদালত চত্বরে তিল ধরানোর জো নেই। গোটা গ্রাম যেন উঠে এসেছে আদালতের দরজায়। বাইরে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা একটাই, যেকোনো মূল্যে ফাঁসি দিতে হবে ওদের। কিন্তু ওরা কারা?

জানা যায়, গত বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্য দিবালোকে বাড়ির উঠানে ঘরের বড় বউকে কুড়ুল দিয়ে কেটে দুখন্ড করেছিল ওরা। সেদিনের ঘটনা আজও ভুলতে মৃত গৃহবধূ ফুলমালার আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে পাড়া প্রতিবেশীরা। জমিজমা নিয়ে বিবাদের জেরে সাত সকালে নিজের বড় বউদিকে কুড়ুল চালিয়ে ছিল অভিযুক্ত দেওর অমর কীর্তনীয়া।

খুনের ঘটনায় ইন্ধন ছিল মৃত ফুলমালার ননদ রাধিকা সরকার ও শাশুড়ি সারথী কীর্তনীয়ার। ওই দিনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে হতবাক হয়ে যান উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর থানার হাটখোলা এলাকার বাসিন্দারা। ঘটনার পরপরই মৃত গৃহবধূর শাশুড়ি, দেওর ও ননদকে গাছে বেঁধে পিটিয়ে গোপালনগর থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয় গ্রামবাসীরা।

অভিযুক্তরা
অভিযুক্তরা

মৃতার বাপের বাড়ির লোকের অভিযোগে ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে বনগাঁ মহকুমা আদালতে পাঠায় পুলিশ। এর মধ্যে কেটে গিয়েছে একটা বছর। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তিন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে বনগাঁ মহকুমা আদালত।

সেই মতো মৃত্যুর ঠিক এক বছর পার হওয়ার দিনই ২৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ছিল সাজা ঘোষণার দিন। সেই উপলক্ষ্য এদিন সকাল থেকেই আদালত চত্বরে ভিড় জমান মৃত ফুলমালার বাপের বাড়ির লোক ও গ্রামবাসীরা। শেষ পর্যন্ত দুপুর তিনটেই সাজা ঘোষণা করেন বনগাঁ মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক পরেশ চন্দ্র কর্মকার।

বিচারে তিন অভিযুক্তের যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করেন তিনি। এরপরই আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃত ফুলমালার মা সবিতা হাওলাদার। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘মেয়ে ফুলমালাকে আর ফিরে পাবো না। কিন্তু খুনিদের ফাঁসি দিক আদালত।’’