কলকাতা: ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু হতেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কমিশনের ঘোষণার পর থেকেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মাঠে নেমে কার্যত ভোটার তালিকা পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার থেকে দেশের ১১টি রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হয়েছে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (Intensive Revision)। কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, ৪ নভেম্বর থেকে বুথ লেভেল অফিসাররা (BLO) ঘরে ঘরে গিয়ে তথ্য যাচাই করবেন। এই পর্যায়ে যাতে কোনও গরমিল বা অনিয়ম না ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে তৎপরতা তুঙ্গে।
অভিষেকের দাওয়াই
দলের সাংসদ, বিধায়ক ও জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে অভিষেক স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন— প্রতিটি বুথে দলের বুথ লেভেল এজেন্ট (BLA)-দের সক্রিয় থাকতে হবে। তিনি বলেন, “যখন বিএলওরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন, তখন তাঁদের এক মুহূর্তের জন্যও চোখের আড়াল হতে দেওয়া যাবে না। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বুথভিত্তিক ক্যাম্প খুলে রাখতে হবে।’’
অভিষেক জানিয়েছেন, ৩ নভেম্বরের মধ্যে বিএলএ ওয়ান ও বিএলএ টুদের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। দলের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি ওয়ার্ড ও গ্রাম পঞ্চায়েত পর্যায়ে এই ক্যাম্পের কাজ তদারকি করতে হবে স্থানীয় নেতৃত্বকে।
নজরদারি চালাবে বিশেষ টিম TMC Voter List Monitoring Abhishek
বর্তমানে রাজ্যে রয়েছে প্রায় ৩,৫০০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং প্রায় ২,৮০০টি ওয়ার্ড। তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রতিটি জায়গায় ভোটার তালিকার প্রক্রিয়া নিয়ে নজরদারি চালাতে বিশেষ টিম তৈরি হয়েছে।
ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে তৃণমূল এত সতর্ক কেন? অভিষেকের বক্তব্য, “কমিশনকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি ভোটার তালিকায় চুপি চুপি কারচুপি করতে চাইছে। একজনও প্রকৃত ভোটারের নাম যাতে বাদ না যায়, তাই এই উদ্যোগ।”
হার্ড কপির সঙ্গে গরমিল
এর আগে তৃণমূল ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেন, ২০০২ সালের ভোটার তালিকার হার্ড কপির সঙ্গে কমিশনের প্রকাশিত ২০২৫ সালের ভোটার তালিকার মধ্যে বিস্ময়কর গরমিল ধরা পড়েছে। তাঁদের দাবি, “এসআইআর প্রক্রিয়ার আড়ালে প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
অভিষেক এদিনও সেই আশঙ্কা পুনরায় তুলে ধরেন। তাঁর বার্তা, “ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে বিজেপি ও কমিশন যাতে একটি প্রকৃত ভোটারের নামও বাদ দিতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।”
এসআইআর আতঙ্কে আত্মহত্যার ঘটনায় উদ্বেগ
এরই মধ্যে এসআইআর ঘোষণার পর আতঙ্কে আত্মহত্যার ঘটনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন অভিষেক। তাঁর দাবি, আগরপাড়া, ইলামবাজার ও দিনহাটায় আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার প্রচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরও জানান, “এদিন টিটাগড়েও কাকলি সরকার নামে এক মহিলা আতঙ্কে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন।”
দলের তরফে বলা হয়েছে, এই ঘটনাগুলি ‘রাজনৈতিক আতঙ্কের ফল’, এবং তৃণমূল এই নিয়ে কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানাবে।



