মিলন পণ্ডা, খেজুরি: পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে বিজেপির অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীকোন্দল ফের গভীর সংকট তৈরি করল জেলাজুড়ে। পরিবারের করা অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার গ্রেফতার (BJP leader arrest) করা হয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ পবিত্র দাসকে। স্থানীয় প্রশাসন তাকে খেজুরি এলাকা থেকে আটক করে নিয়ে যায় এবং বৃহস্পতিবার তাকে কাঁথি মহকুমা আদালতে পেশ করার কথা। ঘটনাটি রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন ফেলেছে।
তদন্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, খেজুরি ২ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতিতে বেশ কিছুদিন ধরে তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি ছিল। এলাকায় ক্ষমতার দোলাচলে একের পর এক দলবদল, কোন্দল ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছিল। বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন উদয় শঙ্কর মাইতি। প্রথমে তিনি দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাল্টে দেন, পরে ফের বিজেপিতে ফিরে আসেন। এই আসা–যাওয়ার ফলে বিজেপির দুই শীর্ষ নেতা উদয় শঙ্কর মাইতি ও পবিত্র দাসের মধ্যে বিস্তর দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
কিছু মাস আগে বিজেপিরই এক গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন উদয় শঙ্কর মাইতি। অভিযোগ ছিল দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের। অভিযোগকারীরা দাবি করেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তবে তার গ্রেফতারের পরেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। অভিযোগ, উদয় শঙ্কর জেলে থাকার সময় পবিত্র দাসের নেতৃত্বে তার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও মারধর করা হয়। পরিবারের সদস্যদের ওপর অমানবিক অত্যাচারের অভিযোগ তোলা হয়।
এই সব অভিযোগের ভিত্তিতে উদয় শঙ্কর মাইতির স্ত্রী তালপাটি উপকূল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর পুলিশের তদন্তে একাধিক প্রমাণ পাওয়ায় বুধবার গ্রেফতার করা হয় পবিত্র দাসকে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুরো ঘটনার সত্যতা যাচাই করা হবে।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। কাঁথি সাংগঠনিক জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি জালাল উদ্দিন খাঁন বলেন, “বিজেপিতে এখন গোয়াল ঘরে গুতাগুতি। নিজেদের কর্মীদের সম্মান দিতে জানে না ওরা। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে দলের ভাঙনই এখন সামনে আসছে।”
তিনি আরও আক্রমণ করে বলেন, নিচ কশবা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাট্টা দুর্নীতির তদন্ত এখনও বাকি। একের পর এক BJP নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগই প্রমাণ করে, মানুষের সামনে বিজেপির মুখোশ খুলে যাচ্ছে।
যদিও বিজেপি নেতৃত্ব এ বিষয়ে সংযত। কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি তাপস দলাই জানান, “পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করেছে। আইন নিজের মতো কাজ করবে। দলের পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য করছি না।”
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, খেজুরি–কাঁথি অঞ্চলে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি থাকলেও সাম্প্রতিক গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তাদের সংগঠনকে দুর্বল করছে। একের পর এক নেতা গ্রেফতার, দলবদল ও পারস্পরিক প্রতিহিংসা বিজেপির ভবিষ্যৎ সংগঠনে সমস্যা তৈরি করবে।
পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে এবং প্রয়োজন হলে আরও কাউকে তলব করা হতে পারে। ফলে খেজুরিতে উত্তেজনা বাড়ছে এবং আগামী দিনে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় তা এখন দেখার বিষয়।
