মুর্শিদাবাদ: মুর্শিদাবাদে আবারও আতঙ্ক ছড়াল। শুক্রবার রাতে রেজিনগর থানার ছেতিয়ানি ঘোষপাড়া এলাকায় প্রবল বিস্ফোরণ (Rejinagar blast) ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা রাতেই আতঙ্কিত হয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ পৌঁছেছে, তবে তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন ছিল। শনিবার সকালে পুলিশ পুনরায় ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বিস্ফোরণটি ঘটেছে একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে। পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই বাড়িতে বোমা বাঁধার কাজ চলছিল। ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় একজন বাসিন্দা নিখোঁজ হয়েছেন। তাঁর নাম ওসমান বিশ্বাস, তিনি তকিপুর পিলখানার বাসিন্দা। শনিবার সকাল থেকেই তাঁর পরিবার ও গ্রামের লোকজন খোঁজাখবর শুরু করেছেন, তবে এখনও কোনও তথ্য মেলেনি।
ওসমানের স্ত্রী সামিরা বিবি জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটার সময় তিনজন মোটরবাইকে এসে তাঁর স্বামীকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। বোমা বাঁধার কাজে তাঁকে যুক্ত করার উদ্দেশ্য ছিল। সামিরা এক জনকে চিনতে পেরেছেন, বাকি দু’জনের মুখ গামছায় ঢাকা ছিল। এই ঘটনার পর থেকে ওসমান আর ফিরে আসেননি।
বিস্ফোরণের পর স্থানীয়রা চারটি প্লাস্টিকের জারে বোমা এবং বিস্ফোরণে ব্যবহৃত মশলা দেখতে পান। খবর পেয়ে রেজিনগর থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। উদ্ধার হওয়া বোমা নিষ্ক্রিয় করার জন্য মুর্শিদাবাদ জেলা বম্ব স্কোয়াডকে ডাকা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকায় প্রচুর ফাঁকা জমি রয়েছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, জমি দখলের জন্য বোমা বানানো হচ্ছিল। তবে এর পেছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, তা তদন্ত করা হচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য, কয়েক দিন আগে মুর্শিদাবাদের ডোমকলে ঘটে গিয়েছিল একটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ। ঘোড়ামারা কামুড়দিয়াড় ঘাটপাড়া এলাকায় একটি বালতিতে রাখা বোমা হাতে পড়ে যায় এক মহিলার। তাঁর নাম ছিদ্দাতন বিবি (৪৯)। ধান আনতে গিয়ে তিনি বালতিতে হাত দিয়ে ফেলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরপর এই দুই বিস্ফোরণে পুরো জেলা শোকে আচ্ছন্ন হয়েছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত, প্রশাসনের কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। গ্রামীণ এলাকায় বোমা তৈরি ও জমি দখলের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চললেও, এবার তা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলমান রয়েছে। বোমা তৈরিতে যুক্তদের খুঁজে বের করা হবে এবং যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নিরাপত্তা জোরদার করতে এলাকায় টহলদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।