কলকাতা: সারদা চিটফান্ড মামলায় এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়৷ রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে বহাল থাকছে তাঁর আগাম জামিন। তবে আদালত অবমাননা মামলার শুনানি এখনও বাকি, এবং সেটির ফলাফলের উপরেই নির্ভর করবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত। আগামী আট সপ্তাহ পরে ফের শুনানি হবে সর্বোচ্চ আদালতে।
ছ’বছর আগের মামলা
প্রায় ছয় বছর আগে রাজীব কুমারকে আগাম জামিন দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সময় সিবিআই অভিযোগ তোলে যে, সারদা মামলার তদন্তে তিনি সহযোগিতা করছেন না, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণও নষ্ট করা হয়েছে। সংস্থার দাবি ছিল, রাজীবের বাড়িতে গিয়ে তদন্তকারী অফিসাররা বাধার মুখে পড়েছিলেন। এরপরই সিবিআই আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে।
শুক্রবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে ওঠে সেই মামলার শুনানি। কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে বলেন, “এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। আমাদের অফিসারদের হেনস্থা করা হয়েছে, মহিলা অফিসারদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করা হয়েছিল। সবাই রাজীব কুমারকে রক্ষা করছে।” তবে আদালত তাঁর যুক্তি মানেনি। সিবিআইয়ের আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেয় বেঞ্চ। ফলে রাজীব কুমারের আগাম জামিন বহাল থাকে।
আগাম জামিন বাতিলের আবেদন খারিজ Rajiv Kumar Saradha Case
রাজীবের পক্ষের আইনজীবী বিশ্বজিৎ দে বলেন, “সিবিআই যে আগাম জামিন বাতিলের আবেদন করেছিল, তা আদালত খারিজ করেছে। তবে আদালত অবমাননার মামলা এখনও চলছে। আট সপ্তাহ পর ফের শুনানি হবে।”
অন্যদিকে রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, “কেন্দ্রের উদ্দেশ্য একটাই— রাজনীতি করা। সারদা মামলা অর্থ তছরুপের মামলা, সেখানে রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে অপরাধের কোনও প্রমাণ নেই। এটা নিছক রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।”
সারদা চিটফান্ড মামলা
প্রসঙ্গত, সারদা চিটফান্ড মামলার প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছিল রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT)। তখন বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার ছিলেন রাজীব কুমার। ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট মামলার তদন্তভার দেয় সিবিআইকে। তারপর থেকেই সিবিআইয়ের অভিযোগ, রাজীব নথি গোপন করছেন ও প্রমাণ নষ্ট করেছেন। যদিও রাজীবের দাবি, তিনি তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন।
সিবিআই তাঁকে শিলংয়ে টানা পাঁচ দিন জেরা করে, পরে হাজিরা দেন কলকাতাতেও। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে অন্তর্বর্তী রক্ষাকবচ দেয়, যা পরে তুলে নেওয়া হয়। সেই সময় আদালত জানায়, চাইলে রাজীব আগাম জামিন নিতে পারেন। হাই কোর্টে গিয়ে তিনি জামিন পান। সেই রায়ের বিরোধিতায় সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল সিবিআই।
এদিনের রায়ে শীর্ষ আদালত স্পষ্ট করল, সিবিআইয়ের যুক্তি প্রমাণের যোগ্য নয়— ফলে বহাল থাকছে রাজীব কুমারের জামিন। আদালত অবমাননার মামলার পরবর্তী শুনানির দিকেই এখন নজর প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলের।