১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী। কয়েকদিন আগে পর্যন্ত দলের হয়ে গলা ফাটিয়েছেন। “দিদির সুরক্ষা কবচ” কর্মসূচি পালন হয়েছে তার বাড়ি থেকেই। তবু শেষ বেলায় পেলেন না দলের টিকিট। তৃণমূলের সেই গ্রাম পঞ্চায়েত (Panchayat) সদস্য এবারে মনোনয়ন করলেন খোদ সিপিএমের প্রার্থী হয়ে। এরকমই ঘটনা মেদিনীপুর সদরের কর্নগড় দশ নম্বর অঞ্চলের বাসিন্দা সুকুমার ঘোষ ওরফে চন্ডী ঘোষের।
২০১৮ তে চন্ডি ঘোষকে কর্ণগড় ১০ নম্বর অঞ্চলের পঞ্চায়েত সদস্য হিসেবে মনোনীত করে দল। ভোটের নিরিখে জয়ী হন এবং তখন থেকেই তিনি পঞ্চায়েতের শাসক দলের সদস্য হিসেবেই কাজ করেন।সম্প্রতি দিদির সুরক্ষা কবচ হিসেবে মেদিনীপুরের বিধায়িকা অভিনেত্রী জুন মালিয়া তার ঘরে রাত্রি নিবাস করেছেন। খাওয়া-দাওয়া করেছেন এবং এক প্রস্থ আলোচনার সঙ্গে এলাকায় দলীয় সংগঠন বাড়াতে তার বাড়ি হাজির হয়েছেন। কিন্তু তারপর পরেই ঘটে ব্যাঘাত। এত একনিষ্ঠ কর্মী হলেও এবারে দল তাকে প্রার্থী করেনি।
এবছর ২০২৩ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের টিকিট না পেয়ে অবশেষে বামেদের হয়ে লড়াই করার চিন্তা ভাবনা নিলেন এই ৫০ ঊর্ধ্ব চন্ডি ঘোষ। যিনি এক সময় স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, যুবশ্রী এবং শিক্ষা বন্ধু সহ একাধিক প্রকল্প নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। তিনিই এবার লাল ঝান্ডা নিয়ে প্রচার করছেন। মনোনয়নেও লড়াই করবেন শাসক দলের বিরুদ্ধেই। এই ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। হঠাৎ রাতারাতি এই দল বদল কেন! কেনই বা এত ক্ষোভ দলের প্রতি? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।
এই প্রসঙ্গে সুকুমার ঘোষ ওরফে চন্ডি ঘোষ বলেন -“দীর্ঘদিন উন্নয়নের সঙ্গী হয়েছি, উন্নয়নের পাশে থেকেছি এবং নিজের টাকা খরচ করে এলাকার মানুষের বিপদে আপদে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারপরও এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে দল আমাকে সেই ভাবে সুযোগ দেয়নি। তাই আমি উন্নয়নের নিরিখেই বামেদের হয়ে মনোনয়ন করলাম। আমার সঙ্গে অঞ্চল তৃণমূল নেতৃত্ব প্রতারণা করেছে। তবে যারা পুরনো সহকর্মী তাদের সঙ্গে অনেকদিন কাজ করেছি তাদের ছাড়তে একটু তো কষ্ট লাগছেই।”
যদিও এই বিষয়ে গুরুত্ব দিতে নারাজ মেদিনীপুরের বিধায়িকা জুন মালিয়া। তাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন -“আমরা মূলত দলের পুরনো সদস্যদের শ্রদ্ধা এবং প্রণাম জানাই। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে, এরই সঙ্গে যাদের বিরুদ্ধে দলের কর্মীদের মনোমালিন্য রয়েছে তাদেরকে সরিয়ে আমরা নতুনদের জায়গা করে দিতে চেয়েছি। সেই নির্দেশই রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফ থেকে। তবে যিনি চলে গেছেন দলের থেকে তার জন্য দরজা বন্ধ এবং তাকে আমরা বাই বাই জানাই।”
এ বিষয়ে স্থানীয় সিপিএমের নেতা তথা জেলা কমিটির সদস্য শ্যাম পান্ডে বলেন-” চন্ডী ঘোষ অনেকদিন থেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তার সঙ্গে আগেও আমাদের সুসম্পর্ক ছিল। আমাদের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে প্রার্থী হতে চেয়েছিল। তাই তাকে প্রার্থী করেছি আমরা।”