ডোডেয়ারহাট গুলিকাণ্ডে শার্প শুটার গ্রেপ্তার, পিস্তল ও কার্তুজ উদ্ধার

কোচবিহার: ডোডেয়ারহাটে রক্তাক্ত গুলিকাণ্ডের ঘটনার সূত্র ধরে অবশেষে গ্রেপ্তার (Shooter Arrested) হল এক কুখ্যাত শার্প শুটার। শনিবার গভীর রাতে অসম-বাংলা সীমান্তের বক্সিরহাট থানার নাকা চেকিং…

ডোডেয়ারহাট গুলিকাণ্ডে শার্প শুটার গ্রেপ্তার, পিস্তল ও কার্তুজ উদ্ধার

কোচবিহার: ডোডেয়ারহাটে রক্তাক্ত গুলিকাণ্ডের ঘটনার সূত্র ধরে অবশেষে গ্রেপ্তার (Shooter Arrested) হল এক কুখ্যাত শার্প শুটার। শনিবার গভীর রাতে অসম-বাংলা সীমান্তের বক্সিরহাট থানার নাকা চেকিং পয়েন্ট থেকে অভিযুক্তকে পাকড়াও করে পুণ্ডিবাড়ি থানার পুলিশ। ধৃতের নাম বিনয় রায়, বাড়ি কোচবিহার-২ ব্লকের সিদ্ধেশ্বরী গ্রামে। তাঁর হেফাজত থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি আধুনিক পিস্তল ও চার রাউন্ড নাইন এমএম কার্তুজ। এই ঘটনার পর ফের আলোচনায় উঠে এল সীমান্তবর্তী এলাকায় বেড়ে চলা অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা ও অপরাধ চক্রের সক্রিয়তা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃষ্ণগোপাল মিনা রবিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, গত ৯ অগাস্ট বিকেলে ডোডেয়ারহাটে আচমকা গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই নিহত হন অমর রায়। গুরুতর আহত অবস্থায় আলমগির হোসেনকে ভর্তি করা হয় একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা যায়, অমরের দেহে চারটি গুলি লেগেছিল— দুটি মাথায় এবং দুটি পেটে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

   

ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বিভিন্ন সূত্র ধরে অবশেষে সন্দেহের তালিকায় উঠে আসে বিনয় রায়ের নাম। জানা যায়, তিনি দীর্ঘ প্রায় সাত বছর ধরে শিলিগুড়িতে আত্মগোপন করে ছিলেন। পুলিশের দাবি, ধৃতের বিরুদ্ধে আগে থেকেই একাধিক অপরাধমূলক মামলা রয়েছে। অবশেষে সীমান্তবর্তী বক্সিরহাট নাকা চেকিংয়ের সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।

পুলিশ সূত্রে খবর, অমর রায়ের সঙ্গে বহু বছর ধরে বিভিন্ন গ্রুপের শত্রুতা চলছিল। তবে এই খুন রাজনৈতিক নাকি ব্যক্তিগত প্রতিশোধের ফল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিনয়কে কে বা কারা খুনের বরাত দিয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তদন্তকারীদের অনুমান, এর পেছনে স্থানীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং পুরনো শত্রুতাই বড় কারণ হতে পারে। তবে রাজনৈতিক যোগসাজশের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ধৃতের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া আধুনিক পিস্তল ও নাইন এমএম কার্তুজ এলাকায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সীমান্তবর্তী কোচবিহার জেলায় বহুদিন ধরেই অবৈধ অস্ত্র চক্র সক্রিয় বলে অভিযোগ। নিয়মিত নাকা চেকিং এবং গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যেও কীভাবে এই ধরনের অস্ত্র মজুত ও ব্যবহার হচ্ছে, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

Advertisements

অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কথায়, “এই গ্রেপ্তারি আমাদের তদন্তকে নতুন দিশা দেবে। কে এই হত্যাকাণ্ডের মূলচক্রী, কারা এর সঙ্গে জড়িত— সেই দিকেই এখন নজর।” বিনয়কে আদালতে পেশ করা হয়েছে এবং তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য বের করার চেষ্টা চলছে।

এই ঘটনায় ডোডেয়ারহাট এবং আশপাশের এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়দের বক্তব্য, “আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। দিনের আলোয় যেভাবে গুলি চলল, তাতে ভয় পাচ্ছি।” বহু পরিবার এখন সন্ধ্যার পর বাইরে বেরোতে সাহস পাচ্ছেন না।

ডোডেয়ারহাট গুলিকাণ্ডে বিনয় রায়ের গ্রেপ্তার নিঃসন্দেহে পুলিশের বড় সাফল্য। তবে খুনের আসল উদ্দেশ্য ও এর নেপথ্যে কারা রয়েছে, তা এখনও রহস্যাবৃত। অস্ত্র ব্যবসা, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও সম্ভাব্য রাজনৈতিক যোগসাজশ— সব দিক খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী দল। এলাকাবাসীর আশা, দ্রুত অপরাধীদের শাস্তি হবে এবং স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে ডোডেয়ারহাট।