জলপাইগুড়ি: উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চলগুলিতে ধস ও বন্যার (North Bengal Flood) পর ধীরে ধীরে ফিরছে স্বাভাবিক ছন্দ। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোনও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। সরকারি তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছিল মোট ৩৯ জনের, এবং শুক্রবার সকালেও সেই সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) ও দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন।
গত কয়েক দিনে বিপর্যস্ত পাহাড়ে পুনর্গঠনের কাজ অনেকটা এগিয়েছে। বিশেষ করে রাস্তাঘাট ও সেতু মেরামতির কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। ফলে যে সমস্ত এলাকায় যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, সেখানে এখন ধীরে ধীরে যাতায়াত স্বাভাবিক হচ্ছে। পাশাপাশি, বিদ্যুৎ পরিষেবাও অনেকাংশে ফিরে এসেছে, যদিও কিছু প্রত্যন্ত এলাকায় এখনও সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
তবে শিক্ষা ক্ষেত্রের অবস্থা এখনও উদ্বেগজনক। বন্যা ও ধসে দার্জিলিং, কালিম্পং ও কুর্সিয়ংয়ের অন্তত ১৮টি স্কুল সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে শিক্ষালয়গুলো কবে পুনরায় খুলবে তা এখনও অনিশ্চিত। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অনেক স্কুল ভবন মেরামতির অযোগ্য হয়ে পড়েছে, কিছু ক্ষেত্রে ক্লাস শুরু করতে অস্থায়ী কাঠামো তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী ১৩ অক্টোবর ফের উত্তরবঙ্গ যাচ্ছেন। সূত্রের খবর অনুযায়ী, এবার তাঁর সফর শুধুমাত্র পাহাড়ি এলাকাগুলিতে সীমাবদ্ধ থাকবে। এর আগে চলতি সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে গিয়েছিলেন, তবে তাঁর সফর তখন মূলত সমতল এলাকাগুলিতে সীমাবদ্ধ ছিল। এবার পাহাড়ের পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যালোচনা করার লক্ষ্যেই নতুন সফর বলে জানা গেছে।
রাজ্য প্রশাসনের প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার সরকারি সম্পত্তির ক্ষতির অস্থায়ী হিসেব দাঁড়িয়েছে ১০.৬২ কোটি টাকা। তবে এটি চূড়ান্ত পরিমাণ নয়। প্রশাসন জানিয়েছে, সড়ক, কালভার্ট, জলাধার ও সরকারি ভবন ক্ষতির বিস্তারিত পর্যালোচনা শেষে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে।
অন্যদিকে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের ক্ষয়ক্ষতির হিসেব এখনও সম্পূর্ণ করা হয়নি। প্রশাসনের অনুমান, চারটি জেলা মিলিয়ে মোট ক্ষতির পরিমাণ আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
পাহাড়ের যেসব ব্লকে সড়ক ধসে বা ভেঙে পড়েছে তার মধ্যে পেদং, লাভা, গরুবাথান ও কালিম্পং ব্লক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে গরুবাথান ও লাভা অঞ্চলে একাধিক রাস্তায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে সেখানে অস্থায়ী রাস্তা তৈরি করে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া হচ্ছে।
NDRF ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রশাসন জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পুনর্বাসন ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবুও পাহাড়ি এলাকাগুলিতে ভূমিধসের আশঙ্কা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিন বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে, তাই সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।