ভাগীরথীর দুই তীরের ভোট সমীকরণের ধাক্কা লাগছে শাসকদল তৃণমূলে এমনই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মুর্শিদাবাদ ও মালদার (Malda) মতো সংখ্যালঘু প্রভাবিত রাজনীতিতে ক্রমে বাড়ছে বাম মিছিলের চেহারা। কারণ এই দুই জেলা থেকে সর্বাধিক সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক অন্য রাজ্যে কাজ করেন। তাদের বাংলাদেশি তকমা দিয়ে বিজেপি শাসিত রাজ্যে হেনস্থা ও নির্যাতন করার ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য সরকারের সদর্থক ভূমিকা সন্দেহজনক বলে দুই জেলায় বিতর্ক তুঙ্গে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরে এসে কাজ করার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে রাজ্যে কর্মের অভাব বলে জানাচ্ছেন পরিযায়ীরা। আর পূর্বতন শাসকদল সিপিআ়ইএমের দাবি, রাজ্যে দৈনিক মজুরির পরিমাণ বাড়াচ্ছে না তৃণমূল সরকার। বাম শাসিত কেরলে দেশে সর্বাধিক মজরুি কমবেশি আটশ টাকা দেওয়া হয়।
দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি, ২০০ দিন কাজ, ভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া এ রাজ্যের মানুষকে বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে অত্যাচার ও হয়রানি বন্ধ করা, নদী ভাঙন ও বন্যা রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন, স্মার্ট মিটার বসানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করা, জীবনদায়ী ওষুধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দ্রব্যমূল্য রোধ সহ অন্যান্য দাবিকে সামনে রেখে সোমবার সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের মালদহ জেলা কমিটির পক্ষ থেকে সোমবার মালদহ টাউন হলে কনভেনশন হয়।
সিপিআইএমের সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, বিধানসভা ভোটের আগে কৌশল করে বাংলাদেশি জিগির তোলা হচ্ছে। মেরুকরণের রাজনীতিতে এই পরিকল্পনা আরএসএস-বিজেপি’র।
সোমবার মালদহে দশ দফা দাবিতে বিক্ষোভ হয়। মিছিল করে শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে জেলা শাসকের দপ্তরে গিয়ে ১০ দফা দাবিতে ডেপুটেশন দেওয়া হয়।সারা ভারত খেত মজুর ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক নিরাপদ সর্দার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের শ্রমজীবী মানুষ, বিশেষত খেতমজুরদের জীবন জীবিকায় চরম সংকট নেমে এসেছে। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ করছে না। আবার দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নিচ্ছে না। যার ফলে রাজ্যের মানুষ কাজ না পেয়ে ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে চরম সমস্যার মধ্যে পড়ছেন।
সিপিআইএম শীর্ষ নেতা ও বীরভূমের প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোম বলেন, ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে রাজ্য, কাজ না পেয়ে ভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া এরাজ্যের ভারতীয় নাগরিক যারা পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে পরিচিত। অথচ এদের অধিকার আছে অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়ার। তা সে কর্মসংস্থান হোক, শিক্ষার জন্য হোক বা অন্য কারণেই হোক। দিল্লি সহ বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষায় কথা বললেই বাংলাদেশি তকমা দিয়ে আক্রমণ নামানো হচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু হলে এই আক্রমণ আরো তীব্র হচ্ছে। গোটাটাই আরএসএস -বিজেপির পরিকল্পনা।
তিনি বলেন, রাজ্যে কাজ নেই তাই রাজ্যর মানুষ দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণে কাজ করতে যাচ্ছেন পরিবারকে বাঁচাতে। রাজ্যের সরকারে আসীন তৃণমূল কংগ্রেসও দায়ী এই হেনস্তার জন্য।