দার্জিলিং: উত্তরবঙ্গের মিরিক অঞ্চলে ধস ও বন্যার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) জরুরি পরিদর্শন হয়েছে। মঙ্গলবার তিনি মিরিক ও আশেপাশের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেন। দুর্যোগের কারণে বহু পরিবার ঘরছাড়া হয়েছে, ভেঙে পড়েছে সেতু, রাস্তা ধসে গেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গতদের পুনর্বাসন, জরুরি ত্রাণ এবং পুনর্নির্মাণের জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দুধিয়ার ভেঙে যাওয়া সেতুটি ১৫ দিনের মধ্যে তৈরি করা হবে। আপাতত হিউম পাইপ দিয়ে অস্থায়ী রাস্তা তৈরি হবে। এটি বড় যানবাহনের জন্য নয়, শুধুমাত্র ছোট যানবাহন এবং মানুষের চলাচলের জন্য। রোহিনীর রাস্তা দ্রুত ঠিক করতে হবে, কারণ সেখানে ল্যান্ডস্লাইড হয়েছে এবং রাস্তার পাথর বের হয়ে গেছে।”
বন্যা ও ধসের কারণে অনেক মানুষ অস্থায়ী ঠিকানায় বসবাস করছেন। ঘরবাড়ি, রান্নার সামগ্রী, পোশাক এবং গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নষ্ট হয়েছে। মমতা বলেন, “কমিউনিটি কিচেন চালু করা হবে। রেশন সরবরাহ করা হবে। বই, কাগজ এবং আধার সংক্রান্ত সমস্যার জন্য বিশেষ ক্যাম্প চালু করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জমি ক্রপ ইন্স্যুরেন্সের আওতায় আনা হবে। আমরা সবসময় আপনার পাশে আছি।”
সেতু ও রাস্তা পুনর্নির্মাণের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, “নতুন পাকা সেতু ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এক বছরের মধ্যে নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যেই ৪১ পাইপ দিয়ে অস্থায়ী সেতু ও রাস্তা তৈরি করা হবে। কাজের সময় সবাইকে লাইফ জ্যাকেট পড়তে হবে। সঙ্গে বোট ও ডুবুরি রাখা হবে যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। হাই টাইড ও প্রবল স্রোতের কারণে কাজ দু’দিন পিছিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের জীবন প্রথমে মূল্যবান।”
মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, “ভুটানের ৫৬টি নদী থেকে জল আসছে। সিকিমেও প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। তাই উত্তরবঙ্গের নদী ও জলাধার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। আমাদের সঠিক পরিকল্পনা ও সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।”
তিনি আশ্বাস দেন যে, মিরিকের পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করা হবে এবং বিভিন্ন দফতর ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শীঘ্রই আবার উত্তরবঙ্গ আসবেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরাসরি নজর রাখবেন।
মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, এই দুর্যোগের ক্ষতি পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার সমস্ত রকম পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, “আপনারা যা হারিয়েছেন তা বোঝেন। তবে আমরা সাহায্য দিয়ে জীবন স্বাভাবিক করতে চাই। আমাদের পরিকল্পনা দ্রুত কার্যকর করা হচ্ছে। আমরা কোনোভাবেই আপনাদের একা ছেড়ে দেব না।”