শিলিগুড়ি: টানা বৃষ্টিতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে উত্তরবঙ্গ ও সিকিম। পাহাড়জুড়ে নেমেছে ধস, বন্ধ হয়ে গেছে একাধিক রাস্তা, ব্যাহত যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৭ জনের, যার মধ্যে রয়েছে এক শিশু। এই পরিস্থিতিতে নিজে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে সোমবার উত্তরবঙ্গ রওনা হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
রবিবার নবান্ন থেকে এক জরুরি বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী, যেখানে উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলার জেলাশাসক। বৈঠকে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য একাধিক পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, সোমবার বিকেল তিনটে নাগাদ তিনি শিলিগুড়ি পৌঁছাবেন এবং সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখবেন। তিনি পর্যটকদের উদ্দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও দিয়েছেন — “বর্তমান আবহাওয়ার পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। আমি সকল পর্যটককে অনুরোধ করছি, আপাতত হোটেল বা থাকার জায়গা থেকে বেরোবেন না। প্রশাসন আপনাদের পাশে রয়েছে।”
দার্জিলিং জেলার মিরিক ও সুখিয়া এলাকায় ভয়াবহ ধসে চাপা পড়ে বহু ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। একাধিক রাস্তা ধসে গিয়েছে, যার ফলে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত। পর্যটকেরা আটকে পড়েছেন বিভিন্ন হোটেল ও লজে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের দল উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। এই দলে রয়েছেন কৃষি দফতর, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের সচিবসহ একাধিক শীর্ষ আমলা। তাদের কাজ হবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন ও দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্য সচিব এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতির উপর নজরদারি করছেন। স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করা হয় এবং আটকে থাকা মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
পর্যটকদের সহায়তার জন্য দার্জিলিং জেলা পুলিশ একটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে। কোথাও আটকে পড়লে সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করা যাবে দার্জিলিং পুলিশ কন্ট্রোল রুমে — ফোন নম্বর: +৯১ ৯১৪৭৮ ৮৯০৭৮। এছাড়াও, জরুরি পরিস্থিতিতে প্রশাসনের বিশেষ দলকে খবর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্থানীয় থানাগুলিকে।
পুজোর মরসুমে উত্তরবঙ্গে পর্যটকদের ভিড় সর্বোচ্চ থাকে। কিন্তু এবারের বৃষ্টিপাত ও ধসের ফলে পর্যটন শিল্পের উপর বড়সড় প্রভাব পড়েছে। বহু বুকিং বাতিল হয়ে গেছে, অনেক পর্যটক এখনো পাহাড়ে আটকে আছেন। হোটেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রশাসনের নির্দেশ মেনে তারা পর্যটকদের বাইরে বেরোতে নিষেধ করছেন।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আটকে থাকা পর্যটকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য রাজ্য সরকার বিশেষ পরিবহণ ব্যবস্থা করছে। উদ্ধারকারী দল কাজ শুরু করেছে এবং ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে। তিনি আরও বলেন, “এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা সকলের পাশে আছি। রাজ্য প্রশাসন নিরন্তর কাজ করছে। আমি নিজে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করব এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেব।”
ধসে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের মানুষ এখন মুখিয়ে আছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সফরের দিকে। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেই আশা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।