HomeWest BengalNorth Bengalমালদা সীমান্তে বিএসএফের বড় সাফল্য, সাইকেল টায়ারে লুকোনো সোনা উদ্ধার

মালদা সীমান্তে বিএসএফের বড় সাফল্য, সাইকেল টায়ারে লুকোনো সোনা উদ্ধার

- Advertisement -

মালদা জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় আবারও বড়সড় সাফল্য পেল বিএসএফ। সোনার চোরাচালান (BSF gold seizure) রুখতে গিয়ে জওয়ানদের নজরদারির নমুনা রাখতে হবে—এমনটাই আবার প্রমাণ করে দিল দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের ১১৯ নম্বর ব্যাটালিয়ন। ঠিকঠাক গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিএসএফ একটি সন্দেহজনক সাইকেল আটক করে এবং তাতে লুকিয়ে থাকা সাতটি সোনার বিস্কুট উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া সোনার মোট ওজন ৮১৬.৪১ গ্রাম, যার বাজারমূল্য এক কোটিরও বেশি—অর্থাৎ আনুমানিক ১,০২,৪০,২৩০ টাকা। তবে সেই সময় সোনাপাচারকারী ব্যক্তি অন্ধকারের সুযোগে পালাতে সক্ষম হয়।

ঘটনা ঘটেছে ২৬ নভেম্বর ২০২৫। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে, অর্থাৎ ঠিক ১৪৫৬ ঘণ্টা নাগাদ, এম.এস. পুর সীমান্ত ফাঁড়ির এলাকায় বিএসএফের জওয়ানরা টহল চালাচ্ছিলেন। তার আগেই ব্যাটালিয়নের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্র থেকে তথ্য পেয়েছিল যে কোনও এক স্থানীয় পাচারকারী সাইকেল ব্যবহার করে বাংলাদেশে সোনা পাচারের চেষ্টা করতে পারে। তথ্য পাওয়ামাত্রই সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি আরও জোরদার করা হয়, এবং সম্ভাব্য রুটগুলিতে অতিরিক্ত জওয়ান মোতায়েন করা হয়। যে কোনও সময়ে পাচারকারী ধরা পড়তে পারে—এমনই সতর্কতা নেওয়া ছিল অবস্থায়।

   

এই বাড়তি নজরদারির সময়ই একজন সন্দেহজনক ব্যক্তিকে সাইকেল নিয়ে সীমান্তের দিকে যেতে দেখা যায়। জওয়ানরা তাকে থামানোর সংকেত দিলে প্রথমে ওই ব্যক্তি স্বাভাবিক আচরণই করছিল। কিন্তু জওয়ানরা সাইকেলটি ভালোভাবে পরীক্ষা করতে শুরু করতেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সাইকেলের সামনের টায়ারটি ছিল অস্বাভাবিকভাবে শক্ত ও ফোলা। সাধারণ টিউবলেস কিংবা টিউব-টাইপ সাইকেল টায়ারের তুলনায় এটি অনেকটাই ভারী এবং অনমনীয় বলে মনে হচ্ছিল। জওয়ানদের সন্দেহ হয় যে টায়ারের ভিতর কিছু লুকোনো আছে।

টায়ার পরীক্ষা করার জন্য একজন জওয়ান যখন হাত বাড়িয়ে টায়ারের পাশ ঘেঁষে চাপ দিতে শুরু করেন, ঠিক সেই মুহূর্তে সন্দেহভাজন ব্যক্তি পরিস্থিতির সুযোগ নেয়। সে আচমকা সাইকেল ফেলে দেয় এবং চারপাশে থাকা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার দিকে ছুটে পালায়। এলাকায় সেই সময় বাজার বসায় ছিল, এবং বহু মানুষ চলাফেরা করছিলেন। ফলে তাকে ততক্ষণে চোখের আড়ালে চলে যেতে বেশি সময় লাগেনি। বিএসএফ জওয়ানরা মুহূর্তের মধ্যে তাকে ধাওয়া করলেও মানুষের ভিড়ের কারণেই তাকে ধরে ফেলা সম্ভব হয়নি।

পরে সাইকেলটি বিএসএফ ক্যাম্পে নিয়ে এসে টায়ার খুলে ফেলা হয়। টায়ারের ভিতরে থেকে একের পর এক সোনার বিস্কুট বের করে আনেন জওয়ানরা। মোট সাতটি সোনার বিস্কুট, প্রতিটিই নিখুঁতভাবে বিশেষ রাবার সিল দিয়ে মোড়ানো এবং টায়ারের ভেতরের স্তরের সঙ্গে চাপা অবস্থায় রাখা হয়েছিল, যাতে সাধারণ চোখে কখনও বোঝা না যায়। টায়ারের ভিতরে এভাবে সোনা লুকোনো—এই পদ্ধতি নতুন নয়, কিন্তু এতটা দক্ষতার সঙ্গে লুকোনো দেখে জওয়ানরাও অবাক হন।

পরবর্তীতে জব্দ সোনার ওজন মাপা হয় এবং জানা যায় মোট ৮১৬.৪১ গ্রাম সোনা এতে রয়েছে। বাজারমূল্য দাঁড়ায় ১ কোটি ২ লক্ষ টাকারও বেশি। পাচারকারী এই সোনা বাংলাদেশে পৌঁছে দিতে পারলে তার বিপরীতপথে বড় অঙ্কের টাকা বা ইলেকট্রনিক বস্তু ফিরে আসত—এমনটাই মনে করছেন তদন্তকারীরা। মালদা-বাংলাদেশ সীমান্ত দীর্ঘদিন ধরেই সোনা, গরু, মাদক, অনুপ্রবেশ এবং নানান ধরনের চোরাচালানের রুট হিসেবে কুখ্যাত। এর আগে বেশ কয়েকবার একই অঞ্চল থেকে বড় পরিমাণে সোনা উদ্ধার হয়েছে।

ঘটনার পর বিএসএফ এলাকার বিভিন্ন গ্রামে তল্লাশি অভিযান চালায় এবং পাচারকারীকে শনাক্ত করার চেষ্টা করে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ধৃত হয়নি। যদিও জওয়ানরা পাচারকারীর সাইকেল, তার সম্ভাব্য রুট, এবং আশেপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করছে। অনেক সময় পাচারকারীরা স্থানীয় পরিচিত যুবক বা গ্রামবাসীও হতে পারে—তাই বিএসএফ স্থানীয় প্রশাসন ও গ্রামপঞ্চায়েতের সঙ্গে সমন্বয়ে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

বিএসএফ দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের জওয়ানরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ডিউটি পালন করেন, এবং তাদের পেশাদারিত্বের কারণেই এই বড়সড় সোনা চোরাচালানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আমরা সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান বন্ধে সর্বদা প্রস্তুত।” তিনি আরও বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দারা যেকোনও সন্দেহজনক নড়াচড়া বা পাচারের তথ্য আমাদের ১৪৪১৯ নম্বর বা ৯৯০৩৪৭২২২৭ নম্বরে জানাতে পারেন। বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের জন্য পুরস্কার দেওয়া হবে, এবং তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রাখা হবে।”

এই ঘটনায় আবারও স্পষ্ট হলো ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সোনার পাচার কতটা সক্রিয়। বহু সোনা পাচারকারী কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, মালদা হয়ে সীমান্তে পৌঁছন এবং সাইকেল, মোটরবাইক, এমনকি হাঁটাপথে এনে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেন। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের পার্থক্য পাচারের প্রধান কারণ, এবং এই পথে কোটি কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন চলে। বিএসএফের এই ধারাবাহিক সাফল্য যে পাচার চক্রের সামনে বড় বাধা, তা সন্দেহ নেই।

মালদার সীমান্তবাসীরাও এই অভিযানের প্রশংসা করেছেন। তাঁদের মতে, বিএসএফের সক্রিয়তা থাকলে চোরাচালান কমবে এবং অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা আরও বাড়বে। তবে পাচারকারীরা প্রতিনিয়ত নতুন পদ্ধতিতে পাচারের চেষ্টা চালাচ্ছে, যা আটকাতে সমান তত্পরতা দেখাতে হচ্ছে জওয়ানদেরও। সব মিলিয়ে সীমান্তে “সোনা বনাম নিরাপত্তা”—এই লড়াই দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular