Alipurduar: আলিপুরদুয়ারে হাতিদের মৃত্যুর জেরে পুরো ট্রেন বাজেয়াপ্ত

পুরো ট্রেন বাজেয়াপ্ত! এমনই এক নজির গড়া সিদ্ধান্তের জেরে রেল মন্ত্রক হতচকিত। ট্রেন বাজেয়াপ্ত করেছে বক্সা টাইগার রিজার্ভ কর্তৃপক্ষ। কারণ সোমবার বক্সা প্রকল্পের অন্তর্গত এলাকায়…

পুরো ট্রেন বাজেয়াপ্ত! এমনই এক নজির গড়া সিদ্ধান্তের জেরে রেল মন্ত্রক হতচকিত। ট্রেন বাজেয়াপ্ত করেছে বক্সা টাইগার রিজার্ভ কর্তৃপক্ষ। কারণ সোমবার বক্সা প্রকল্পের অন্তর্গত এলাকায় মালগাড়ির ধাক্কায় শাবক সহ তিনটি হাতির মৃত্যু হয়েছে। তিনটি হাতি ট্রেনের চাকায় পিষ্ট হয়। এই দুর্ঘটনা ঘটে সোমবার সকালে আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) রাজভাতখাওয়ায়।

নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত! হাতি ‘হত্যার’ ঘটনায় গোটা একটা মালগাড়িকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বক্সা ব্যঘ্র প্রকল্পের তরফে। সাম্প্রতিককালে এমন ঘটনা দেখা যায়নি। কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বন দফতর? সংবাদমাধ্যমকে জানালেন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ অতনু রাহা। তিনি জানান, “দেখুন এরকম নয় যে মালগাড়ির অ্যাক্সিডেন্টে হাতিটা মারা গেছে সেটা হচ্ছে…গাড়ি ধাক্কা দিয়ে যদি কাউকে মেরে ফেলা হয় তাহলে গাড়িটিকেও সিজ় করা হয় এবং যে ড্রাইভার তাকেও অ্যারেস্ট করা হয়। কিন্তু এখানে সেরকমভাবে ঘটনা ঘটছে। আস্ত মালগাড়িকে সিজ় করেছে এবং এটা আমি জানিনা সেটার ভবিষ্যৎ কী হবে। তবে এটা নজিরবিহীন ঘটনাই। যদি এটা থেকে অন্তত সবাই যদি একটু শিক্ষা নেয় তবে ভাল হয়। কতটা এটাকে ইমপ্লিমেন্ট করা যাবে সেটা অবশ্য পরের কথা। কিন্তু ইটস অ্যান এক্সেমপ্লারি পানিশমেন্ট (Its an exemplary punishment at this initial state)।”

প্রাক্তন প্রধান মুখ্য বনপাল অতনু রাহা জানান যে এটাকে একটা বার্তা হিসাবে ভাবা জেতে পারে। যেভাবে একটা দুর্ঘটনা ঘটল যেখানে গতিবিধি রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে যে যেখানে জাতীয় উদ্যান বক্সার ব্যঘ্র প্রকল্প, তার মধ্যে দিয়ে একটা নির্দিষ্ট গতিবিধি রয়েছে, সেই গতিবিধি মানা হয়েছিল কিনা, যদি মানা না হয়ে থাকে তাহলে তার দায় কোথাও গিয়ে রেলের উপরে পড়ছে। রেলের তরফ থেকেই চালকদের কাছে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের কড়া নির্দেশিকা থাকার কথা , কোথাও গিয়ে চালকের দোষ কিনা, এই সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখার রয়েছে এবং সেই কারণেই গোটা গাড়ি বাজেয়াপ্ত হয়েছে বক্সা ব্যঘ্র প্রকল্পের তরফে।

সোমবার একসাথে তিনটি বুনো হাতির মৃত্যু হয় ডুয়ার্সে। এদিন সকালে আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) জংশন থেকে শিলিগুড়ি জংশনগামী একটি মালগাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে ওই তিনটি হাতির মৃত্যু হয়। রাজাভাতখাওয়া স্টেশনের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মৃত্যুর জেরে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। জঙ্গলে ঘেরা এই ট্রেন লাইনে বারবার হাতি মৃত্যুর ঘটনা যেমন ঘটে তেমনি চালক অনেক সময় ট্রেন ধীরে চালিয়ে হাতি বাঁচিয়ে দেন। সোমবার সকালে তিনটি হাতির মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুরদুয়ারের রাজাভাতখাও রাজাভাতখাওয়ার শিকারি গেট এলাকায়। মালগাড়ির ধাক্কায় শাবক সহ তিনটি হাতি ছিটকে যায়। তাদের রক্তাক্ত দেহগুলি লাইনের চারপাশে পড়ে আছে। আরও কয়েকটি হাতি জখম বলে জানায় শিকারিগেট এলাকাবাসী। তারা লাইন অবরোধ করেছেন। বনফতর ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

উল্লেখ্য, বারবার ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর খবর সামনে আসছে। তাই এবার জঙ্গলের মধ্যে হাতি চলাচলের নিরাপদ রাস্তা তৈরির জন্য উদ্যোগ নিয়েছে বন দফতর। বাড়ানো হচ্ছে হাতির করিডোরের সংখ্যা। আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলা মিলিয়ে আরও সাতটি নতুন করিডোর তৈরি করা হচ্ছে বলে বন দফতর সূত্রে খবর।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, একটি নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে হাতির দল নিয়মিত এক জঙ্গল থেকে অন্য জঙ্গলে যায়। সেক্ষেত্রে হাতির যাত্রাপথের মাঝে জনবসতি বা রাস্তা থাকলে সমস্যা তৈরি হয়। সে কারণেই বন দফতরের উদ্যোগে হাতির জন্য নির্দিষ্ট করিডোরের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে কোচবিহার জেলাতেও একটি বিশেষ করিডোর তৈরির কথা ঘোষণা করা হয়। প্রায় ৫ কিলোমিটার লম্বা ও ২০০ মিটার চওড়া এই করিডরটি তৈরি হবে উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে। একসঙ্গে যাতে অনেক প্রাণী ওই করিডর দিয়ে যাতায়াত করতে পারে, তাই ২০০ মিটার চওড়া প্রশস্ত করিডর তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।