HomeWest BengalNorth Bengalশিলিগুড়ি করিডোরে জারি হাই অ্যালার্ট, চলছে নাকা তল্লাশি

শিলিগুড়ি করিডোরে জারি হাই অ্যালার্ট, চলছে নাকা তল্লাশি

- Advertisement -

শিলিগুড়ি: সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লির লালকেল্লা সংলগ্ন এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর গোটা দেশে জারি হয়েছে চরম সতর্কতা। জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে হাই-অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে দেশের কৌশলগতভাবে সবচেয়ে স্পর্শকাতর অঞ্চল, ‘চিকেনস নেক’ বা শিলিগুড়ি করিডোরে (Siliguri security)। উত্তর-পূর্ব ভারতের সাথে মূল ভূখণ্ডের সংযোগকারী এই একমাত্র স্থলপথে এখন ২৪ ঘণ্টা চলছে সেনা, আধা-সেনা ও পুলিশি নজরদারি।

দিল্লি বিস্ফোরণের অভিঘাত রাজধানী ছাপিয়ে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত পৌঁছতেই বিএসএফ, এসএসবি, রাজ্য পুলিশ, সিআইএসএফ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে একযোগে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভুটান তিনটি আন্তর্জাতিক সীমান্তঘেরা এই অঞ্চল আগেই জঙ্গি কার্যকলাপের ‘সফট টার্গেট’ হিসেবে পরিচিত। তাই ঝুঁকি এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়িয়ে ত্রিমাত্রিক সুরক্ষাবলয় তৈরি করা হয়েছে।

   

শিলিগুড়ি শহর কার্যত এখন নিরাপত্তার অভেদ্য দুর্গ। শহরের প্রবেশ ও নির্গমনের প্রতিটি পয়েন্টে চলছে কড়া নাকা চেকিং। রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাস, বিমানবন্দর, হাইওয়ের সংযোগস্থল, বাজার এলাকা—সব জায়গাতেই নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাফ (RAF) এবং কুইক রেসপন্স টিম (QRT)-ও টহল দিচ্ছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়।

উত্তরবঙ্গের আইজি রাজেশ কুমার যাদব জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী থানা ও পুলিশ ফাঁড়িগুলিকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএসএফ ও এসএসবি আধিকারিকদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। সন্দেহজনক গতিবিধির ওপর বিশেষ নজর রাখা হয়েছে।

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি রাকেশ সিং বলেন, “শহরের হোটেল, লজ, হোমস্টে সব জায়গায় তল্লাশি চলছে। স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের পরিচয়পত্র যাচাই করা হচ্ছে। বাগডোগরা বিমানবন্দরে সিআইএসএফ নিরাপত্তা আরও কঠোর করেছে। কোথাও কোনও শৈথিল্য রাখা হচ্ছে না।”

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ফুলবাড়ি সীমান্ত লাগোয়া ১২টি গ্রাম সর্দারপাড়া, ধদাগছ, জুমাগছ, লক্ষ্মীস্থান, নারায়ণজোত, ভুরিভিটা-সহ বেশ কিছু এলাকাতে বিশেষ নজরদারি চলছে। এখানে বসবাস করেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। এই অঞ্চলগুলিতে বিএসএফ নাইট ভিশন ক্যামেরা, ড্রোন মনিটরিং, অতিরিক্ত চেকপোস্ট এবং টহল বাহিনীর সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে।

দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে কোচবিহার পর্যন্ত ৪ হাজার কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পাহারা দিচ্ছে বিএসএফ-এর ১৮টি ব্যাটেলিয়ন এবং ৪টি সেক্টর। অন্যদিকে ভারত–নেপাল ১,৭৫১ কিলোমিটার সীমান্তের সুরক্ষায় রয়েছে সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)। শুধুমাত্র দার্জিলিং জেলাতেই প্রায় ১০০ কিলোমিটার নেপাল সীমান্ত যেখানে চলছে ২৪ ঘণ্টার মনিটরিং, লাগানো হয়েছে অস্থায়ী ব্যারিকেড এবং বাড়ানো হয়েছে তল্লাশি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকেনস নেক ভারতের ‘লাইফলাইন’। এই ২২ কিলোমিটার চওড়া সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তাই প্রতিরক্ষার প্রশ্নে এটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর একটি। এখানেই জঙ্গি সংগঠন, চোরাকারবারি এবং অনুপ্রবেশকারীদের প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা বরাবরের মতো বেশি। দিল্লি বিস্ফোরণের পর সেই আশঙ্কা আরও বাড়ায় কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না প্রশাসন।

এদিকে প্রশাসনের তরফে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। যে কোনও সন্দেহজনক ব্যক্তি, বস্তু বা গতিবিধি চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী থানায় বা পুলিশের হেল্পলাইন নম্বরে জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আলোড়ন থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে নিরাপত্তা নিয়ে কোনওরকম আপস করা হবে না বলেও স্পষ্ট করা হয়েছে।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular