দুর্যোগ কাটিয়ে দার্জিলিংয়ে ফের ভিড়, খুশি পর্যটন মহল

দার্জিলিং: দুর্যোগ কাটিয়ে ফের চেনা ছন্দে ফিরছে দার্জিলিং (Darjeeling)। কয়েক সপ্তাহ আগেও প্রবল বর্ষণ ও ধসের জেরে পাহাড়ি জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল, বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ির যোগাযোগ। কিন্তু প্রশাসনের দ্রুত উদ্যোগে এখন সেই ছবিটা পুরো পাল্টে গিয়েছে। দীপাবলি ও কালীপুজোর আগে ফের ভরে উঠছে পাহাড়ি শহর, বাড়ছে পর্যটকের ভিড়।

Advertisements

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি দার্জিলিংয়ের মহাকাল মন্দিরে পুজো দিয়ে পাহাড়ের মানুষ ও পর্যটকদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন— “পাহাড় এখন একেবারে নিরাপদ। ভয় না পেয়ে সবাই আসুন। দুর্যোগের সময় আমরা ১৫০০ পর্যটককে নিরাপদে নামিয়ে এনেছিলাম। এখন দুই রাস্তাই খোলা— তিনধারিয়া ও পাঙ্খাবাড়ি। পর্যটন ফের ছন্দে ফিরছে।”

গত কয়েকদিনের দুর্যোগে দার্জিলিংয়ের বহু সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পাহাড়বাসীর জীবিকা ও পর্যটন শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পূর্ত দপ্তর ও জিটিএ-র যৌথ উদ্যোগে দিনরাত কাজ চলছে। পূর্ত দপ্তরের সচিব অন্তরা আচার্য জানিয়েছেন, “দুধিয়া সেতুটি অস্থায়ী বেলি ব্রিজ তৈরি করে চালু করা হবে আগামী ৬–৭ দিনের মধ্যে।” মুখ্যমন্ত্রী অনীত থাপাকে নির্দেশ দিয়েছেন, সমস্ত রাস্তার কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কি না, তার দিকে কড়া নজর রাখতে।

বর্তমানে দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ি নামার দুটি প্রধান রাস্তা— হিলকার্ট রোড ও পাঙ্খাবাড়ি রোড— খুলে দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তিনধারিয়া হয়ে সুকনা পর্যন্ত গাড়ি চলাচলের অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিকিম থেকে কালিম্পং–লাভা–লোলেগাঁও হয়ে শিলিগুড়ির বিকল্প রাস্তাও চালু রয়েছে।

জিটিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, মিরিক ব্লক ও বিজনবাড়ি ব্লকের একাধিক রাস্তায় সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। সুখিয়োপোখরিতে সোনাদা থেকে মুনদা যাওয়ার রাস্তা এবং মিলিং রোডও খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে গরুবাথান, লাভা ও কালিম্পংয়ের কিছু ছোট রাস্তা এখনও সংস্কারের পর্যায়ে আছে।

Advertisements

দার্জিলিঙের হোটেল মালিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ফের বুকিং বাড়ছে, পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে। “দুর্যোগে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার আশার আলো দেখছি,” বলছেন এক স্থানীয় হোটেল মালিক। দীপাবলি ও ছটপুজো ঘিরে পাহাড়ের হোটেল ও হোমস্টেগুলিতে আগাম বুকিংয়ের জোয়ার।

রাজ্যের পর্যটন দপ্তর জানিয়েছে, রাস্তাগুলি খোলার পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় বিশেষ নজরদারি ও ধসপ্রবণ অঞ্চলে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দার্জিলিং এখন উৎসবের রঙে রাঙা। কুয়াশায় মোড়া পাহাড়, চায়ের সুবাস, ঠান্ডা হাওয়া— ফের প্রাণ ফিরে পাচ্ছে “পাহাড়ের রানি”। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাসে ভর করে পাহাড়ে পর্যটনের নবজাগরণ, আর স্থানীয়দের মুখে একটাই কথা— “দার্জিলিং ফের বাঁচল!”