অয়ন দে, কোচবিহার: জেলার দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের নাজিরহাট দুই নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের গাড়ালঝোড়া সীমান্ত গ্রামে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ-এর (BSF) চেকিং পয়েন্টে হয়রানির অভিযোগে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, বিএসএফ তল্লাশির নামে তাঁদের নিয়মিত হয়রানি করছে, যার জেরে ক্ষোভে ফুঁসছেন গ্রামবাসীরা। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকালে গাড়ালঝোড়া সীমান্তে বিক্ষোভে সামিল হন এলাকাবাসী, ফলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
স্থানীয়দের দাবি, বিএসএফ প্রতিদিন সীমান্ত এলাকায় চেকিংয়ের নামে বাসিন্দাদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। বাজারে যাওয়া বা অন্যত্র যাতায়াতের সময় সচিত্র পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য করা হচ্ছে, এমনকি অহেতুক জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাঁদের। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল করিম জানান, “আমরা এই গ্রামে বছরের পর বছর ধরে বসবাস করছি। কিন্তু এখন প্রতিদিন বিএসএফ-এর তল্লাশির নামে আমাদের অপমানিত হতে হচ্ছে। এটা আমাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকারের উপর আঘাত।”
বিক্ষোভের আগে সকালে স্থানীয়রা বিএসএফ আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তবে এই আলোচনায় কোনো সমাধান না হওয়ায় গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সীমান্ত এলাকায় জমায়েত হন এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য নবির উদ্দিন মিয়া বলেন, “আমরা সীমান্তে এমন চেকিং পয়েন্ট মেনে নেব না, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে বিঘ্নিত করে। আমরা স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার চাই।” তিনি আরও জানান, এই হয়রানির ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে ভয় ও অসন্তোষ বাড়ছে।
এদিকে, এই ঘটনায় বিএসএফ-এর পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে সূত্রের খবর, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে বর্তমানে চলমান টানাপোড়েনের জেরে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভারত সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর ফলে সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হয়েছে, যা স্থানীয়দের জন্য অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রেহানা বিবি বলেন, “আমরা বাজারে যেতে গেলে বা কাজে বেরোলেই বিএসএফ-এর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। আমাদের পরিচয়পত্র থাকলেও অহেতুক সময় নষ্ট করা হয়। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।” তাঁর মতো অনেকেই মনে করছেন, নিরাপত্তার নামে সাধারণ মানুষের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
এই ঘটনা গাড়ালঝোড়া সীমান্ত গ্রামে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, যদি তাঁদের দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তবে তারা আরও বৃহৎ আন্দোলনের পথে হাঁটবেন। এলাকার যুবক রহিম শেখ বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের সমস্যার কথা জানিয়েছি। কিন্তু সমাধান না হলে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হব।”
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন ও বিএসএফ-এর পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেদিকে নজর রয়েছে সকলের। সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা বজায় রাখার পাশাপাশি স্থানীয়দের অসুবিধা কমানোর জন্য দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। এই ঘটনা কোচবিহারের সীমান্তবর্তী এলাকায় নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে, এবং আগামী দিনে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।