হ্রদ বিপর্যয়ের জেরে বুধবার তিস্তার হড়পা বানে সিকিমের বারদাংয়ে সেনা ছাউনি ভেসে গেছে। জওয়ানদের পাশাপাশি জলের তোড়ে ভেসে গেছে অস্ত্র, গোলাবারুদ। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলার ময়নাগুড়ি, ক্রান্তি ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় তিস্তা থেকে উদ্ধার হয়েছে মর্টার শেল। অনেকে সেসব উদ্ধার করে বাড়িতেও নিয়ে যান। ক্রান্তির চাঁপাডাঙ্গা এলাকায় এক ব্যক্তি মাছ ধরতে গিয়ে তিস্তায় ভেসে আসা সেনার মর্টার শেল বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। বৃহস্পতিবার আচমকা তাতে বিস্ফোরণ হয়। ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক শিশুর। আহত হয়েছেন আরও ৫ জন।
সেই ঘটনার পর শুক্রবার সকালে সেনাবাহিনী, সিআইডির বম্ব স্কোয়াডের ও জেলা পুলিশ কর্মীরা চাঁপাডাঙ্গায় যান। তিস্তার চরে বোমা ও গোলাবারুদ নিষ্ক্রিয় করেছেন। আর তা দেখতে ভিড় করেন আশপাশের লোকজন। এলাকায় আরও শেল রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে এলাকা পরিদর্শন করবেন বম্ব স্কোয়াড।
জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সামাজিক মাধ্যমে সতর্কবার্তা বলেছে, নদীতে ভেসে আসা কোনও অচেনা বস্তু, প্যাকেট, আগ্নেয়াস্ত্র দেখলেই নিকটবর্তী থানায় জানাতে। কোনওভাবেই স্পর্শ করবেন না। জানা গিয়েছে তিস্তা তীরবর্তী গ্রামাঞ্চলে অনেকেই নদীতে বিশেষ ধরণের প্যাকেট ও বস্তু ভাসতে দেখেছেন। সেগুলি সিকিমের ধংস হয়ে যাওয়া সেনা ছাউনির আগ্নেয়াস্ত্র বলে মনে করছে জেনা পুলিশ। চলছে তল্লাশি।
সিকিমে তিস্তার বন্যায় ১১ টি সেতু ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে শুধুমাত্র মঙ্গন জেলায় আটটি সেতু ভেসে গেছে। নামচিতে দুটি এবং গ্যাংটকে একটি সেতু ধ্বংস হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চার জেলায় পানির পাইপলাইন, স্যুয়ারেজ লাইন এবং কুঁচা ও কংক্রিটের ২৭৭টি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। তিস্তা নদীতে আকস্মিক বন্যা, উত্তর সিকিমের লোনাক হ্রদে মেঘ বিস্ফোরণের ফলে, প্রচুর পরিমাণে জল জমেছিল, যা চুংথাং বাঁধের দিকে মোড় নেয় এবং স্পেটে স্রোতে যাওয়ার আগে বিদ্যুতের পরিকাঠামো ধ্বংস করে, শহর ও গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
মঙ্গন জেলায় প্রায় ১০০০০ মানুষ এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পাকিয়ং-এ ৬৮৯৫ জন, নামচিতে ২৫৭৯ জন এবং গ্যাংটকে ২৫৭০ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিস্তার উপরিভাগে অবিরাম বৃষ্টির কারণে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় SSDMA জনগণকে তিস্তা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। সিকিম রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এসএসডিএমএ) একটি বুলেটিনে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত, ২০১১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, এবং বিপর্যয় ২২০৩৪ জনকে প্রভাবিত করেছে। বন্যার পরে কমপক্ষে ২১ জন মারা গেছে এবং ২২ সেনা কর্মী সহ আরও ১০৩ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে৷