কলকাতার দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব- মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল। এই দুই দলের ম্যাচকে কেন্দ্র করে হাঁদা, ভোঁদার শুরু পথচলা। গল্পের নাম ‘হাঁদা ভোঁদার জয়’।
প্রয়াত হয়েছেন বাংলা কমিক শিল্পের কিংবদন্তি নারায়ণ দেবনাথ (Narayan Debnath)। বিদায় বেলায় বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। রেখে গিয়েছেন অমর কিছু সৃষ্টি। যার মধ্যে অন্যতম- হাঁদা, ভোঁদা। হাঁদা, ভোঁদাকে নিয়ে নারায়ণ দেবনাথের প্রথম সৃষ্টির নাম ‘হাঁদা ভোঁদার জয়’। গল্পের বিষয়বস্তু, কলকার দুই ক্লাবের ম্যাচ।
১৯৬২ সালে শুকতারা পত্রিকায় কার্টুন আঁকতে শুরু করেছিলেন এক ব্যক্তি। বয়স তাঁর ৩৭। তিনি তখনও বিখ্যাত কেউ নন। আর্ট কলেজের ছাত্র। বাড়ির সোনার দোকানেও কাজ করেছেন। সেই নারায়ণ দেবনাথ শুরু করলেন কমিক সিরিজ৷ মূল দুই চরিত্র হাঁদা এবং ভোঁদা। পুরো নাম হাঁদারাম গড়গড়ি, ভোঁদারাম পাকড়াশী। রোগা গড়নের ছেলেটার নাম হাঁদা। আর স্বাস্থ্যবান ছেলেটির নাম ভোঁদা। দু’জনের এক পিসেমশাই-ও ছিলেন। নাম- বেচারাম বক্সী। পিশেমশাইয়ের সঙ্গে কিছু না কিছু সমস্যা লেগেই থাকত ছেলে দু’টির।
বইয়ের অন্দরে একবার ঢুকে পড়তে পাড়লে সেটা শুধু আর বই থাকে না। বাস্তবের কোনো চরিত্রই যেন ধরা পড়ে পাঠকের মনন ক্যানভাসে। পাতার পর পাতা উল্টোতে থাকেন পাঠক। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘আনপুটডাউনেবল’। নারায়ণ দেবনাথের হাঁদা ভোঁদা তেমনই এক সিরিজ। যা বিস্মিত করেছে, আনন্দিত করেছে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। শেষ বয়সে হাসপাতালের বেডে বসেও শিল্পী হাতে তুলে নিয়েছিল পেন, খাতা৷ ২০১৭ সাল পর্যন্ত হাঁদা ভোঁদাকে নিয়ে নতুন নতুন কমিক উপহার দিয়ে গিয়েছেন নারায়ণ দেবনাথ।
আগে পেন্সিলেই আঁকতেন তিনি। পরে রঙিন ছবি। প্রথম রঙিন কমিক বাটুল দ্য গ্রেট। ‘কলেজ স্ট্রিট থেকে ফেরার পথে বাটুলের চিন্তা মাথায় আসে। আর তখনই আঁকতে বসি। হাঁদা-ভোঁদার গল্পগুলো আমার জীবনে দেখা নানা দৃশ্য থেকে উঠে এসেছে। কমলা শিল্পালয়ে যখন বসতাম, তখন বাইরের শিশু, কিশোরদের দুরন্তপনা অনেক দেখেছি। হাঁদা-ভোঁদায় সেসবই ফিরে ফিরে এসেছে।’ কমলা শিল্পালয় মানে পারিবারিক স্বর্ণালংকারের দোকান। সেখানে কিছু ডিজাইনও করেছিলেন তিনি। ফলত তাঁর কলম কখনও থেমে থাকেনি। তিনি শিল্পী৷ ভাবনার প্রকাশ করেছেন গ্রাফাইট, দোয়াত-কালির আঁচরে। নারায়ণ দেবনাথই একমাত্র কার্টুনিস্ট যিনি পেয়েছিলেন ডি.লিট৷