পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যসেবা খাতে একটি গৌরবময় মুহূর্ত এসেছে। ভারত সরকারের (modi government india) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় রাজ্যের অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য প্রশংসা করেছে। ‘১০০ দিনের টিবি মুক্ত ভারত অভিযান’-এর অধীনে অতিরিক্ত টিবি কেস শনাক্তকরণে (Additional TB Case Notification) বাংলা তার অসামান্য পারফরম্যান্সের জন্য কেন্দ্রের নজরে এসেছে। এই সাফল্য প্রমাণ করে যে, রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা কীভাবে দ্রুত ও কার্যকরভাবে কাজ করে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তার এক্স হ্যান্ডেলে এই প্রশংসা পত্রটি পোস্ট করেছেন।
এই অভিযানের মূল লক্ষ্য হল টিবি (যক্ষ্মা) রোগের প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং তার দ্রুত নির্মূল। বিশেষজ্ঞদের মতে, টিবি নির্মূলের জন্য প্রাথমিক সনাক্তকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা তার অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়িয়েছে এবং সময়মতো হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এই লক্ষ্যে সাফল্য দেখিয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ গ্রাম থেকে শহর—সর্বত্র টিবি পরীক্ষার ব্যবস্থা জোরদার করেছে। এর ফলে নতুন রোগীদের শনাক্তকরণে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে, যা চিকিৎসার প্রথম ধাপ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে যে, ১০০ দিনের এই তীব্র অভিযানে বাংলা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অতিরিক্ত টিবি কেস শনাক্তকরণে শীর্ষে রয়েছে। এই অভিযান, যা প্রধানমন্ত্রী টিবি মুক্ত ভারত অভিযানের (PMTBMBA) একটি অংশ, ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতকে টিবি মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। বাংলার এই সাফল্য শুধু রাজ্যের জন্যই নয়, গোটা দেশের জন্য একটি উৎসাহব্যঞ্জক উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সাফল্যের জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “এই কৃতিত্ব আমাদের নিবেদিতপ্রাণ স্বাস্থ্যকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। তারাই এই সম্ভব করে তুলেছেন। প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি শহরে তারা দিনরাত পরিশ্রম করে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কাজ করে চলেছেন।” তিনি আরও জানান, রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতির জন্য ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছে এবং টিবি নির্মূলের এই লড়াইয়ে কোনও কসুর রাখবে না।
Proud moment for Bengal!
The Ministry of Health & Family Welfare, Government of India has lauded our state for its outstanding performance in Additional TB Case Notification under the 100 Days TB Mukt Bharat Abhiyaan.
Early detection is key to eradication, and Bengal’s… pic.twitter.com/J8OCG2dqMv
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) March 24, 2025
পশ্চিমবঙ্গে টিবি নির্মূলের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে বিনামূল্যে টিবি পরীক্ষা ও ওষুধ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া, নিক্ষয় পোষণ যোজনার মাধ্যমে টিবি রোগীদের পুষ্টি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার এই যোজনার আর্থিক সাহায্য প্রতি মাসে ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১,০০০ টাকা করেছে, যা রোগীদের চিকিৎসার সময় পুষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা এই সুবিধাগুলি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করেছে, যার ফলে রোগীদের চিকিৎসার ফলাফলও উন্নত হয়েছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, টিবি শনাক্তকরণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এই সাফল্যের অন্যতম কারণ। গ্রামে গ্রামে ক্যাম্প করে মানুষকে টিবির লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। একজন স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, “আগে মানুষ টিবি পরীক্ষা করতে ভয় পেতেন। কিন্তু এখন তারা নিজে থেকে এগিয়ে আসছেন। এই পরিবর্তনই আমাদের সাফল্যের চাবিকাঠি।” তিনি আরও জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে টিবি ধরা পড়ায় রোগীরা দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন এবং রোগ ছড়ানোর ঝুঁকিও কমছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলার এই সাফল্য অন্য রাজ্যের জন্যও অনুকরণীয় হতে পারে। টিবি নির্মূলের জন্য শুধু চিকিৎসা নয়, সমাজের সব স্তরের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। বাংলা সেই দিক থেকে একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা দেখিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলি একযোগে কাজ করছে, যা এই অভিযানকে আরও শক্তিশালী করেছে।
এই সাফল্যের পিছনে রাজ্যের স্বাস্থ্য অবকাঠামোর উন্নতিও একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। গত কয়েক বছরে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি, আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের মাধ্যমে বাংলা তার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেছে। এই অবকাঠামোই টিবি শনাক্তকরণ ও চিকিৎসায় গতি এনেছে।
এই প্রশংসা বাংলার জন্য গর্বের বিষয় হলেও, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনও অনেক কাজ বাকি। টিবি পুরোপুরি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তারা আশা করছেন, এই গতি বজায় থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলা টিবি মুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। এই ঘটনা শুধু স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নয়, রাজ্যের প্রশাসনিক দক্ষতারও প্রমাণ। স্বাস্থ্যকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সরকারের সঠিক পরিকল্পনা একযোগে কাজ করে এই সাফল্য এনেছে। বাংলার এই পথচলা অন্যদের জন্যও একটি আলোকবর্তিকা হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।