ছাব্বিশের ভোটে নন্দীগ্রামে লড়বেন না মমতা, দলবদলুকে প্রার্থী করার ভাবনা

২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটকে ( West Bengal assembly election 2026) সামনে রেখে নন্দীগ্রামকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে ফের উত্তেজনা বাড়ছে। ২০২১ সালে নন্দীগ্রামের আসনে শুভেন্দু অধিকারীর…

India alliance leaders support Mamata Banerjee as Supreme leader of the Alliance and keep distance from Congress

২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটকে ( West Bengal assembly election 2026) সামনে রেখে নন্দীগ্রামকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে ফের উত্তেজনা বাড়ছে। ২০২১ সালে নন্দীগ্রামের আসনে শুভেন্দু অধিকারীর কাছে হেরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সেই স্মৃতি এখনও তাজা। কিন্তু আগামী ভোটে তিনি নন্দীগ্রাম থেকে আর লড়বেন না— এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে শাসকদল। পরিবর্তে আলোচনায় উঠে এসেছে এক চমকপ্রদ নাম—দলবদলু প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর মোকাবিলায় তাঁকেই নামানোর কথা ভাবছে।

নন্দীগ্রামের বাড়তি গুরুত্ব
তৃণমূল সূত্রে খবর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি রাজ্যের প্রায় সব জেলায় ব্লক ধরে বৈঠক করছেন। ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব বৈঠক শেষ হলেও নন্দীগ্রামের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা একটি দিন। ১৩ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই বৈঠক হবে বলে ধারণা। নন্দীগ্রামকে ঘিরে যে দলের আলাদা প্রস্তুতি, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এখানেই শুরু হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে জল্পনা।

   

কেন রাজীব?
প্রথমত, নন্দীগ্রামে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল বহুদিনের। সেই অশান্ত পরিবেশে স্থানীয় কোনও নেতাকে প্রার্থী করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। তাই শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছে বাইরের, পরিচিত কিন্তু নিরপেক্ষ একজনকে।

দ্বিতীয়ত, রাজীবের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও সাংগঠনিক দায়িত্ব সামলানোর রেকর্ড রয়েছে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তমলুক কেন্দ্রে তিনি দলের পর্যবেক্ষক ছিলেন। যদিও দেবাংশু ভট্টাচার্য বিজেপির প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে হেরে যান, তবুও রাজীবের কার্যকলাপে নেতৃত্ব সন্তুষ্ট হয়েছিল।

তৃতীয়ত, তমলুক লোকসভার অন্তর্গত হওয়ায় নন্দীগ্রামের রাজনৈতিক মাটির সঙ্গে রাজীব আগেই পরিচিত। ব্লক স্তরের বহু নেতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে গত দুই বছরে।

তবে লড়াই কঠিন
তৃণমূলের নিজস্ব হিসেব বলছে, গত লোকসভা ভোটের নিরিখে নন্দীগ্রামে তারা প্রায় ৯ হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী সেখানে এখনও শক্তিশালী। ফলে রাজীবের জয় খুব সহজ নয়। অনেকেই মনে করছেন, তাঁকে নামানো হলে তা মূলত কৌশলগত পদক্ষেপ হবে—হয়ত তিনি হেরে গেলেও পরে তাঁকে সম্মানজনক দায়িত্ব দেওয়া হবে। রাজনৈতিক মহলের ভাষায়, এটি অনেকটা ‘‘ইন্দ্রনীল সেন মডেল’’—যেখানে নিশ্চিত হারের ময়দানে কাউকে নামিয়ে পরে তাঁকে মন্ত্রিসভায় পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে।

Advertisements

মমতার সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত
২০২১ সালে নন্দীগ্রামে নাটকীয় ভোটগণনার শেষে মাত্র ১,৯৫৬ ভোটে হেরেছিলেন মমতা। সেই পরাজয়ের পর থেকেই তিনি আর একবার সেই ঝুঁকি নেবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। এ বার রাজীবকে সামনে আনার আলোচনা স্পষ্ট করছে—২০২৬-এ মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়াবেন না। ফলে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ের মঞ্চে তাঁকে দেখা যাবে না।

রাজীবের প্রতিক্রিয়া
তবে রাজীব নিজে কোনও নিশ্চয়তা দিচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘আমায় কেউ কিছু বলেননি। আমি জানিও না। এই প্রথম শুনলাম। নন্দীগ্রামে দাঁড়ানোর খবর পুরোটাই রটনা।’’ যদিও তাঁর এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল বাড়িয়েছে। কারণ অতীতে দেখা গেছে, তৃণমূল প্রার্থী নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলেও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত নেতারা তা স্বীকার করেন না।

রাজনীতির পরিহাস
ঘটনাচক্রে, ২০২১ সালের ভোটের আগে শুভেন্দু অধিকারীর ডাকেই রাজীব বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। ডোমজুড়ে প্রার্থী হয়ে তিনি পরাজিত হন। কয়েক মাসের মধ্যেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে ফেরেন। তার পর তাঁকে ত্রিপুরায় সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়। সম্প্রতি হাওড়া জেলা পরিষদে মেন্টর করা হয়েছে। আর পাঁচ বছর পর সেই রাজীবকেই শুভেন্দুর বিপরীতে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা করছে তৃণমূল।

নন্দীগ্রামের আসন নিয়ে যে আগামী বিধানসভা ভোটের আগেই রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন চলবে, তা স্পষ্ট। শুভেন্দু বনাম রাজীব—এই সমীকরণে কতটা বদল আসবে, তা সময় বলবে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরে দাঁড়ালে তা বিরোধী শিবিরের কাছে অবশ্যই বড় রাজনৈতিক বার্তা। তৃণমূলের কৌশল কতটা সফল হয়, তা নির্ভর করবে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় মাঠে নামবেন কি না এবং নামলে কতটা জমি কেটে নিতে পারবেন তার উপর।