ওয়াকফ বিলের বিরোধিতায় পথে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস

TMC to Hold Protest Against Waqf Bill

তৃণমূল কংগ্রেস ওয়াকফ বিলের (Waqf Bill) বিরোধিতায় সরব। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলকে মুসলিম সমাজের স্বার্থ বিরোধী হিসেবে অভিহিত করে রাজ্যের শাসকদল রাস্তায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর রাণী রাসমণি রোডে একটি বিশাল জনসমাবেশ আয়োজন করবে তৃণমূল। সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন দলের বরিষ্ঠ নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। প্রসঙ্গত, ফিরহাদ হাকিম তৃণমূলের মুসলিম মুখ এবং কল্যাণ ব্যানার্জি ওয়াকফ সংক্রান্ত সংসদের যৌথ্য কমিটির সদস্য৷

Advertisements

এছাড়াও, এই বিলের বিরোধিতা করে রাজ্য বিধানসভায় একটি প্রস্তাব আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের দাবি অনুযায়ী, কেন্দ্রের এই বিলের ফলে ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ বাড়বে এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য ও ধর্মীয় অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কেন এই বিলের বিরোধিতা?
ওয়াকফ সম্পত্তি সাধারণত মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এবং জনহিতকর কাজে ব্যবহৃত হয়। কেন্দ্রের প্রস্তাবিত ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলটি অনুযায়ী, ওয়াকফ বোর্ডের কাজের ওপর কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ বাড়বে। বোর্ডের গঠন এবং পরিচালনায় পরিবর্তন আসতে পারে। এছাড়াও, কোনো রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ড কেন্দ্রীয় সংস্থার নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগেরও অভিযোগ উঠেছে।

তৃণমূল নেতাদের মতে, এই বিল মুসলিম সমাজের ধর্মীয় এবং সামাজিক অধিকারকে হরণ করার চেষ্টা করছে। ফিরহাদ হাকিম ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে বলেছেন, “ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্ব রাজ্যের। কেন্দ্রীয় সরকার এই বিল এনে শুধু মুসলিমদের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে না, বরং সংবিধানবিরোধী পদক্ষেপ করছে।”

তৃণমূলের কর্মসূচি ও প্রতিবাদ
৩০ নভেম্বরের সমাবেশে তৃণমূল নেতৃত্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আশা, এই সমাবেশ রাজ্যের মুসলিম সমাজের কাছে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সমাবেশে বিভিন্ন জেলার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিম ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন দলের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা।

এর পাশাপাশি, বিধানসভায় একটি প্রস্তাব আনার চিন্তাভাবনা করছে তৃণমূল। প্রস্তাবটি পেশ করবেন দলের কোনো বিধায়ক। প্রস্তাবে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হবে এবং রাজ্যের অধিকার রক্ষার দাবি জানানো হবে।

Advertisements

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “ওয়াকফ বোর্ড মুসলিম সমাজের সম্পত্তি সংরক্ষণ এবং ধর্মীয় উন্নয়নের জন্য। কেন্দ্রীয় সরকার তাদের আইন দিয়ে সেই অধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। আমরা বিধানসভায় এই বিষয়ে জোরালো প্রতিবাদ করব।”

বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
ওয়াকফ বিল ইস্যুতে তৃণমূলের এই প্রতিবাদে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিজেপির বক্তব্য, “তৃণমূল রাজনৈতিক স্বার্থে ওয়াকফ ইস্যুকে কাজে লাগাচ্ছে। এই বিল সমাজের স্বচ্ছতা আনবে এবং দুর্নীতি কমাবে।” অন্যদিকে, সিপিএম এই বিলের কিছু অংশ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তৃণমূলের উদ্দেশ্য নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে।

তবে, রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বিল নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ধর্মীয় নেতারা মনে করছেন, ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারালে মুসলিম সমাজের সার্বিক উন্নয়ন বাধা পাবে।

মুসলিম সম্প্রদায়ের বার্তা
মুসলিম সংগঠনগুলির দাবি, এই বিল পাস হলে ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ আরোপ হবে, যা রাজ্যের আইন ও সংবিধানের পরিপন্থী। অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদ-উল মুসলেমিন (এআইএমআইএম)-এর কিছু নেতাও এই বিষয়ে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠিয়েছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ

তৃণমূলের এই কর্মসূচি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের অবস্থানকে আরও জোরালো করতে পারে। সমাবেশে কতটা ভিড় হয় এবং বিধানসভায় তৃণমূলের প্রস্তাব কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়।