মমতা-অভিষেকের পদযাত্রা, ভোটার তালিকা বিতর্কে উত্তপ্ত রাজ্য

Mamata and Abhishek Begin TMC Mega Rally with Tribute at Ambedkar Monument

কলকাতা: নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে শুরু হওয়া SIR প্রক্রিয়া ঘিরে রাজ্যজুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষোভ বাড়ছে। বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলে এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে পথে নামতে চলেছেন। আগামী ৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার, কলকাতার ধর্মতলার গান্ধী মূর্তির পাদদেশ থেকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত এক বিশাল পদযাত্রার আয়োজন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।

Advertisements

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওইদিনের এই মিছিলে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, কাউন্সিলর এবং হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক। এই পদযাত্রার মূল উদ্দেশ্য— বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনের তথাকথিত ‘ষড়যন্ত্র’-এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা।

   

তৃণমূলের দাবি, এসআইআর প্রক্রিয়ার নামে রাজ্যের সাধারণ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে আতঙ্কে তিনজনের মৃত্যু ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একাধিক ক্ষেত্রে ভোটারদের দরজায় গিয়ে হুমকি, ভয় দেখানো এবং ভুল তথ্য দেওয়ার ঘটনাও সামনে এসেছে।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার বিএলএ (Booth Level Agents)–দের নিয়ে এক ভারচুয়াল বৈঠকে জানিয়েছেন, “বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশন মিলে বাংলার মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চাইছে। আমরা তা হতে দেব না। প্রতিটি নাগরিকের পাশে থাকবে তৃণমূল।”

তিনি ঘোষণা করেছেন, আগামী ৪ নভেম্বর থেকেই রাজ্যজুড়ে ৬২০০টি হেল্পডেস্ক চালু করবে তৃণমূল কংগ্রেস। একমাস ধরে এই হেল্পডেস্ক চলবে। ভোটার তালিকা সংশোধন, এসআইআরের ফর্ম পূরণ বা নাম বাদ যাওয়ার মতো সমস্যায় সরাসরি সহায়তা পাবেন সাধারণ মানুষ।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে বলেছেন, “এসআইআরের নামে গণতন্ত্রকে হত্যা করার চেষ্টা চলছে। বিজেপি ভয় পেয়ে গিয়েছে, তাই তারা বৈধ ভোটারদের নাম তালিকা থেকে মুছে দিতে চাইছে।”

Advertisements

রাজ্যের শাসকদলের বক্তব্য, আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই এই পদক্ষেপ বিজেপির ‘রাজনৈতিক কৌশল’। তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছে, এসআইআরের অজুহাতে কেন্দ্রের শাসকদল ভোটার তালিকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে, যাতে নির্বাচনে সুবিধা হয়।

এদিকে, বিজেপি অবশ্য তৃণমূলের অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, “এসআইআর একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া, যা প্রতি বছরই হয়।” কিন্তু তৃণমূলের বক্তব্য, এবারের প্রক্রিয়াটি একেবারে আলাদা, কারণ “অস্বাভাবিক সংখ্যক ভোটার তালিকা সংশোধনের ঘটনা ঘটছে।”

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মমতা-অভিষেকের এই পদযাত্রা শুধু প্রতিবাদ নয়, বরং আগামী নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন বার্তা। ধর্মতলা থেকে ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত এই প্রতীকী পদযাত্রার মধ্য দিয়ে তৃণমূল জানাতে চাইছে— “গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে রাজ্যের মানুষ একজোট।”

পুলিশ সূত্রে খবর, ওইদিন শহরে কড়া নিরাপত্তা থাকবে। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে থাকবে ট্রাফিক পুলিশ। কেন্দ্রস্থল এলাকায় যানজটে ভোগান্তি হতে পারে সাধারণ মানুষের। তৃণমূলের তরফে ইতিমধ্যেই শান্তিপূর্ণ মিছিলের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

তৃণমূল নেতা সৌগত রায় বলেন, “আমরা ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত মেনে নেব না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্ব দেবেন গণতন্ত্র রক্ষার মিছিলে।”