কলকাতা: বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন ৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে এবছরও সংহতি দিবস (Solidarity Day) পালন করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কলকাতার মেয়ো রোডে গান্ধিমূর্তির পাদদেশে অনুষ্ঠিত হতে চলা এই সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা এই মঞ্চ থেকেই কি শুরু হবে ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার?
তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার জানিয়েছেন, প্রতিবছরের মতো এ বছরও কেন্দ্রীয়ভাবে মেয়ো রোডে আয়োজিত হবে এই কর্মসূচি। যদিও প্রতিবছর সংখ্যালঘু সেল এই অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকে, এবছর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের যুব ও ছাত্র সংগঠনকে। দলের মূল নেতৃত্ব এবং যুব নেতাদের উপস্থিতিতে এবারের সমাবেশ আরও বড় আকার নিতে পারে বলে অনুমান।
তৃণমূল সূত্রে খবর, ২০১১ সালের পরে প্রায় প্রতি বছরই সংহতি দিবসের মঞ্চে হাজির ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে গত কয়েক বছরে প্রশাসনিক কাজের ব্যস্ততায় মাঝে মাঝে তাঁকে অনুপস্থিত দেখা গেছে। কিন্তু এবছর পরিস্থিতি আলাদা। এসআইআর ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে বিজেপির তোপ এই সংহতি দিবসের মঞ্চকে বিজেপিকে আক্রমণের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে পারে ঘাসফুল শিবির।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংহতি দিবস তৃণমূলের কাছে শুধু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দেওয়ার দিন নয়, বরং বিজেপির “ধর্মের রাজনীতি”র বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার কৌশলগত দিনও। মমতা-অভিষেক এবার ধর্মনিরপেক্ষতা, সামাজিক সম্প্রীতি, গণতান্ত্রিক অধিকার এবং ‘সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ’-এর বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিতে পারেন বলে ধারণা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শক্তিশালী করা, সংখ্যালঘু ও দলিত সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, এবং যুবকদের জন্য ভবিষ্যৎ কর্মসূচি এসব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসতেও পারে। আসন্ন ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কোন লাইন ধরে প্রচার করবে, তার প্রথম রূপরেখা এই মঞ্চেই তুলে ধরা হতে পারে।
প্রতি বছরের মতো এবছরও বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরুদের উপস্থিতি সংহতি দিবসকে আরও অর্থবহ করবে। ইসলাম, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতাদের উপস্থিতি তৃণমূলের “সব ধর্মের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলা” এই বার্তাকে আরও শক্তিশালী করবে। অতীতে ধর্মীয় সম্প্রীতির এমন মঞ্চ তৃণমূলকে রাজনৈতিকভাবে লাভ করেছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
২১ জুলাই শহীদ দিবসের মঞ্চ যেমন তৃণমূলের বার্ষিক রাজনৈতিক দিশা ঠিক করে দেয়, তেমনই ৬ ডিসেম্বরের সংহতি দিবস এবছর নির্বাচনী প্রচারের সূচনা মঞ্চ হয়ে উঠবে বলে মত নেতৃত্বের। ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক কলকাতায় সমবেত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে ৬ ডিসেম্বর মেয়ো রোডে রাজনৈতিক তাপমাত্রা তুঙ্গে ওঠা নিশ্চিত।
