কলকাতা: রাজ্যে শুরু হয়েছে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যেই ২৮ অক্টোবর থেকে চলছে ব্লক লেভেল অফিসার বা বিএলওদের প্রশিক্ষণ পর্ব, যা চলবে আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলের সংগঠনকে আরও প্রস্তুত করতে এবং এসআইআর প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের ডাক দিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দফায় দফায় প্রশিক্ষণ বৈঠক শুরু করবেন। তবে মূল বৈঠকটি নির্ধারিত হয়েছে শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটেয়। সেই ভারচুয়াল বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন দলের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, জেলা সভাপতি, ব্লক নেতৃত্ব ও বুথ এজেন্টরা। অভিষেক নিজেই এসআইআরের উদ্দেশ্য, কার্যপ্রণালী এবং দলের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশ দেবেন।
তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, এসআইআর প্রক্রিয়ার জন্য যে সংখ্যক ব্লক লেভেল এজেন্ট (BLA-2) প্রয়োজন, তার জন্য দল ইতিমধ্যেই পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে। রাজ্যের প্রতিটি বুথে সংগঠনের জোরে তৃণমূলের বিএলএ ২ নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। দলের বক্তব্য— “আমাদের সংগঠন বুথ পর্যন্ত বিস্তৃত, ফলে ভোটার তালিকার কাজ আমরা অত্যন্ত দক্ষভাবে সম্পন্ন করতে পারব।”
তৃণমূলের অভিজ্ঞ বুথ এজেন্টদেরও এবার কাজে লাগানো হচ্ছে। দলের তরফে জানানো হয়েছে, যাঁরা এতদিন ভোটার তালিকা স্ক্রুটিনির কাজ করেছেন, যাঁরা প্রত্যেক ভোটারকে চিনেন, তাঁদেরই বিএলও এবং নতুন এজেন্টদের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিছু বুথে যোগ্যতা অনুযায়ী সামান্য রদবদল করা হয়েছে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এসআইআর শুধুমাত্র প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নয়, এটি আমাদের সাংগঠনিক সক্ষমতারও প্রমাণ। প্রতিটি বুথে সঠিক প্রস্তুতি থাকলে ২০২৬ সালের নির্বাচনে ফল আমাদের পক্ষে যাবে।”
রাজনৈতিক মহলে অভিষেকের এই বৈঠককে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি, বাদ পড়া নাম সংশোধন, মৃত ভোটার মুছে দেওয়া এবং স্থানান্তর সংক্রান্ত তথ্যের যাচাই করা হবে। ফলে এই পর্যায়ের কাজ নির্বাচনী প্রস্তুতির ভিত্তি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে তৃণমূল।
অন্যদিকে, বিরোধীরা এই তৎপরতার দিকে সন্দেহের চোখে দেখছে। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূল “ভোটার তালিকাকে নিজেদের সুবিধেমতো সাজানোর” চেষ্টা করছে। যদিও শাসকদলের দাবি, তাঁদের এই উদ্যোগ কেবলমাত্র সংগঠনের স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, অভিষেকের এই নির্দেশ তৃণমূলের বুথভিত্তিক কাঠামোকে আরও মজবুত করবে। এসআইআর পর্যায়ে প্রতিটি ব্লক ও বুথে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দল সংগঠন ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া— দুই ক্ষেত্রেই নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে চাইছে।


