Hijab Row: পাঁচ বছর আগে শিক্ষাঙ্গনে হিজাব বিতর্কের সূত্রপাত হয় বাংলায়

হিজাব (Hijab) নিয়ে বিতর্কের জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। কর্ণাটকের কলেজ বা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গণ্ডি পেরিয়ে তা যায় হাই কোর্টে। সেখানে হিজাবের বিরুদ্ধে রায় দেন…

hijab debate started in Bengal

হিজাব (Hijab) নিয়ে বিতর্কের জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। কর্ণাটকের কলেজ বা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গণ্ডি পেরিয়ে তা যায় হাই কোর্টে। সেখানে হিজাবের বিরুদ্ধে রায় দেন বিচারক। যার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন মামলাকারীরা। এই নিয়ে উত্তাল হয়ে রয়েছে জাতীয় রাজনীতি। কিন্তু এই হিজাব বিতর্কের সূত্রপাত ঘটেছিল আর বছর পাঁচেক আগে। আর তা হয়েছিল বাংলার মাটিতেই।

২০১৭ সালের মার্চ মাস। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম বিধানসভার অন্তর্গত ধান্যখোলা আদর্শ বিদ্যাভবনে শুরু হয়েছিল হিজাব নিয়ে বড় বিতর্ক। সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সূর্য মধ্য গগণে। আর তখনও নন্দীগ্রামে বিধায়ক ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই সঙ্গে তিনি রাজ্যের মন্ত্রীও ছিলেন। যার জেরে স্কুলের মধ্যে চলে ভাঙচুর। সেই সঙ্গে প্রধান শিক্ষককেও মারধোর করা হয়। পরে হামলাকারীদের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয় ওই স্কুলের পধান শিক্ষককে।

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন পবিত্র কুমার মাইতি। মাথায় ধর্মীয় ফেজ টুপি দিয়ে স্কুলে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিলেন তিনি। সেই সবই ছিল সাময়িক। ২০১৭ সালের মার্চে পরীক্ষার সময়ে স্কুলের ইউনিফর্মের বদলে ১৭ জন পড়ুয়া হিজাব এবং ফেজ টুপি পরে স্কুলে আসে। ঙ্খলাভঙ্গের কারণে প্রধান শিক্ষক ১৭ জনকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন। প্রধান শিক্ষক পড়ুয়াদের বলেন, “এটা তো মাদ্রাসা নয়! তাই এখানে স্কুলের নির্দিষ্ট পোশাক পরেই আসতে হবে।”

শুরুতে পড়ুয়ারা তা মেনেও নিয়েছিল। কিন্তু সমস্যা হয় কয়েকদিন পরে। প্রধান শিক্ষক পবিত্রবাবুর ওই সিদ্ধান্তের পরিণতিতে সেই ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবারসহ এলাকার লোকেরা, স্থানীয় সংখ্যালঘু ধর্মগুরুরা ও সামসাবাদ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান শেখ খুশনবীর নেতৃত্বে বিদ্যালয়ে হাজির হন। ভাঙচুর করা হয় চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ আর কম্পিউটার। বেধড়ক পেটানো হয় পবিত্রবাবুকেও।

ধর্মের মোহে নিমজ্জিত থাকা হামলাকারীরা স্কুলের শৌচালয় ভেঙে ফেলেছিল। কারণ ওই শৌচালয়ের দরজা ছিল পশ্চিমমুখী। এরপরে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। সেই সঙ্গে আসেন পুলিশের বড়কর্তারা এবং মুসলিম সমাজের মাওলানা ও জামাত ইসলামের নেতারা। আপোসে বিষয়টির মীমাংসা হয়। প্রধান শিক্ষক নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং মুসলিম ছাত্রছাত্রী ও মাওলানাদের সব দাবী মেনে নেন। সেই দাবিগুলি ছিল-
১) ছাত্রছাত্রীরা মুসলিম টুপি ও হিজাব পরে লাগিয়ে স্কুলে আসতে পারবে।
২) প্রতি শুক্রবার মুসলিম ছাত্রদের নামাজ পড়ার জন্য এক ঘন্টা ছুটি দেওয়া হবে।
৩) স্কুলে নবী দিবস পালিত হবে।
৪) শৌচালয়ের পুরো ভেঙে দিয়ে উত্তরমুখী করে দরজা বসানো হবে।

কানাঘুষো শোনা যায় যে প্রধান শিক্ষকের সকল দাবি মেনে নেওয়া এবং ক্ষমা চাওয়ার পিছনে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের প্রভাব ছিল। নির্দেশ গিয়েছিল খোদ নবান্ন থেকে। পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন মৌলবাদীদের দাবি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু কর্ণাটকের ক্ষেত্রে তা হয়নি। বিজেপি পরিচালিত ওই রাজ্যের সরকার নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। কোনও অবস্থাতেই মৌলবাদীদের দাবি মেনে নেয়নি।