যুগের অবসান, প্রয়াত আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী

বাংলার জাতির ইতিহাস নিয়ে উদাসীন। সেই সময় এই রকম গুনীজনের চলে যাওয়া আমাদের কাছে সত্যি দুঃখের খবর।প্রখ্যাত রাঢ় গবেষক শ্রী যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী (Joggeswar Choudhury )…

historian joggeswar choudhury

বাংলার জাতির ইতিহাস নিয়ে উদাসীন। সেই সময় এই রকম গুনীজনের চলে যাওয়া আমাদের কাছে সত্যি দুঃখের খবর।প্রখ্যাত রাঢ় গবেষক শ্রী যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী (Joggeswar Choudhury ) ১৯৪০ খ্রি. ৭ জুন বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার অন্তর্গত শ্রীশ্রীযোগাদ্যা দেবীর সুপ্রাচীন পীঠস্থান ক্ষীরগ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কলকাতার সিটি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট হন ।

United Commercial Bank – এ কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৬৭-তে কর্মরত অবস্থায় এম.কম. পাশ করেন। ওই ব্যাঙ্কে উচ্চপদস্থ অফিসার পদে দায়িত্ব ছিলেন। তবুও এই ব্যাস্ত কর্মজীবনের ফাঁকে তিনি বাঙালির জাতির সেবায় লিখে গেছেন একাধিক কালজয়ী গ্রন্থ । যা আমাদের কাছে সম্পদ হয়ে আছে।

তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি হল: বর্ধমান: ইতিহাস ও সংস্কৃতি (তিন খণ্ডে ১৯৯০, ৯১, ৯৪), যুগস্রষ্টা শ্রীচৈতন্য (২০০৪), স্মার্ত্রঘুনন্দন (২০০২), শ্রীচৈতন্যদেব ও সমকালীন নবদ্বীপ (২০০৪), একটি বিস্মৃত রাজধানী (২০০৪), আঞ্চলিক ইতিহাস সাধনা (২০০৫), আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চা ও গ্রন্থপঞ্জী (২০০৮), রাঢ়ের সাংস্কৃতিক ইতিহাস (২০০৮), পদাবলীতে নিমাই সন্ন্যাস (২০০৯), শ্রীগৌরাঙ্গদেবের সন্ন্যাস গ্রহণ (২০১০), শাক্তপীঠ ক্ষীরগ্রাম ও দেবী যোগাদ্যা (২০১০), চৈতন্য সংস্কৃতিতে কীর্তনের ভূমিকা (২০১৫), নবদ্বীপ বিদ্যাসমাজের ইতিহাস (২০১৬), বর্ধমান জেলার পুরাকীর্তি (২০১৯) ইত্যাদি। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭টি। বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন ।

বর্ধমান ইতিহাস ও সংস্কৃতি (তিন খণ্ড), শ্রী চৈতন্যদেব ও সমকালীন নবদ্বীপ, যুগস্রষ্টা শ্রী চৈতন্য, আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চা ও গ্রন্থপঞ্জী , রাঢ়ের সাংস্কৃতিক ইতিহাস, নবদ্বীপ বিদ্যাসমাজের ইতিহাস, আঞ্চলিক ইতিহাস সাধনা, পদাবলিতে নিমাই সন্ন্যাস, যুগস্রষ্টা শ্রীচৈতন্য। তাঁর এই সব গ্রন্থের সমালোচিত হয়েছে – দেশ, আনন্দবাজার, বর্তমান সহ বিভিন্ন প্রথম শ্রেণির বাংলা দৈনিক ও পত্র-পত্রিকায়।
চলে গেলেন যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী। আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চার একটি প্রতিষ্ঠানের অবসান হলো। রেখে গেলেন তাঁর সোনালি ফসল আগামী প্রজন্মের কাছে। তাঁকে আমার বিনম্র প্রণাম। শ্রদ্ধা।

যজ্ঞেশ্বর শিবের নামেই তাঁর নামকরণ হয়েছিল। কাটোয়া সম্পর্কে তাঁর নীরব অভিমান ছিল। যজ্ঞেশ্বরবাবুর অমর সৃষ্টি বর্ধমানঃ ইতিহাস ও সংস্কৃতি। বইটি শুধু আঞ্চলিক ইতিহাসের দলিল নয়; তাঁর এই বইটিতে বর্ধমানের অসংখ্য পূর্বতন বিস্মৃতপ্রায় ইতিহাস গবেষকের কাজের রেফারেন্স ব্যবহৃত হয়েছে। তাঁর এই গ্রন্থে সেইসব ইতিহাস সাধকদের উপস্থিতি রয়েছে।

তিনি আঞ্চলিক ইতিহাসকে তথ্য নির্ভর করতে চেয়েছিলেন। বয়স হলেও স্মৃতি শক্তি ছিল প্রচণ্ড। প্রবল স্মৃতিধর মানুষ ছিলেন। অনেক সময় তিনি প্রকাশ্যে তথ্যগত অসংগতি দেখিয়ে বলে দিতেন কোন গ্রন্থের কত নম্বর পাতায় আসল তথ্যটি রয়েছে।