কলকাতা, ১৮ অক্টোবর ২০২৫: দেশের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এল। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) পশ্চিমবঙ্গ থেকে এক ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযোগ, ওই ব্যক্তি একজন পাকিস্তানি অপারেটিভকে সহযোগিতা করে প্রায় ২৫০ জন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীর জন্য ভুয়ো ডকুমেন্ট ও পাসপোর্ট তৈরি করতে সাহায্য করেছেন। ঘটনাটি সীমান্ত সুরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলছে।
কীভাবে ফাঁস হল কাণ্ড?
ইডির তদন্তকারীরা সূত্র ধরে জানতে পারেন, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভুয়ো পরিচয়পত্র ও নথি সরবরাহের একটি নেটওয়ার্ক সক্রিয় রয়েছে। এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি পাকিস্তানি এক অপারেটিভের কাছ থেকে সরাসরি যোগাযোগ পেয়েছিলেন। তাঁকে দিয়ে অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতের ভেতরে থাকার বৈধ কাগজপত্র তৈরি করানো হচ্ছিল।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ২৫০টিরও বেশি কেসে ভুয়ো পাসপোর্ট ও নথি প্রস্তুত করা হয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে অবৈধভাবে বিভিন্ন শহরে থাকা সহজ হচ্ছিল।
ইডির বক্তব্য
ইডি কর্মকর্তাদের মতে, “এটি শুধু অর্থনৈতিক অপরাধ নয়, বরং সরাসরি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত একটি ঘটনা। পাকিস্তানি অপারেটিভরা যদি ভারতের ভেতরে অবৈধভাবে প্রবেশ করা বাংলাদেশি অভিবাসীদের বৈধ পরিচয়পত্র পাইয়ে দিতে পারে, তবে তা সন্ত্রাসবাদ ও গুপ্তচরবৃত্তির ক্ষেত্রেও গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।”
সীমান্ত রাজ্যের সংবেদনশীলতা
পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে। বহুদিন ধরেই অবৈধ অভিবাসন একটি বড় ইস্যু। ভুয়ো নথি প্রস্তুতের মাধ্যমে এ ধরনের অভিবাসীদের বৈধ পরিচয়ের আড়ালে লুকিয়ে রাখা হলে তা গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
জিজ্ঞাসাবাদে কী বের হল?
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে ইডি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সূত্র অনুযায়ী, তিনি স্বীকার করেছেন যে টাকা ও অন্যান্য সুবিধার লোভে এই চক্রে যুক্ত হয়েছিলেন। তদন্তকারীরা এখন খতিয়ে দেখছেন—
কারা কারা এই ভুয়ো নথির সুবিধা পেয়েছে
পাকিস্তানি অপারেটিভদের সঠিক ভূমিকা কী ছিল
পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য রাজ্যে এই নেটওয়ার্ক ছড়িয়েছিল কি না
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনা সামনে আসতেই রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিরোধীরা বলছে, সীমান্ত রাজ্যে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য প্রশাসনের গাফিলতি বারবার প্রমাণিত হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার বলছে, ইডি ও গোয়েন্দা সংস্থার সক্রিয় ভূমিকাতেই এই নেটওয়ার্ক ফাঁস হয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তায় বড় চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা গোটা দেশের জন্য বড় সতর্কবার্তা। বিদেশি অপারেটিভরা অবৈধ অভিবাসনকে হাতিয়ার বানিয়ে যদি ভারতের ভেতরে নিরাপত্তা ঘাঁটি গড়ে তুলতে পারে, তবে তা গোটা ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক বিপদ।
ইডির এই গ্রেপ্তার প্রমাণ করছে যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সীমান্ত অঞ্চলে সক্রিয় নেটওয়ার্কগুলির ওপর নজরদারি আরও বাড়াচ্ছে। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—২৫০টিরও বেশি ভুয়ো নথি তৈরি হয়ে গেল কীভাবে? কারা এর পিছনে মূলচালক? এই তদন্তের ফলাফলই জানাবে, ভবিষ্যতে দেশ কতটা সুরক্ষিত থাকবে।