CPIM: শূন্যে নয়, উত্তর লুকিয়ে আম-আদমির নার্ভে

বামেরা (CPIM) আপাতত শূন্য নয়। অক্সিজেন যুগিয়েছে কলকাতা পুরসভা নির্বাচন। আলিমুদ্দিনে স্বস্তি দিয়েছেন শহরের দুই প্রার্থী। সামনে বাকি এখনও অনেক পথ৷ রাজনীতির নিরিখে হয়তো তা…

বামেরা (CPIM) আপাতত শূন্য নয়। অক্সিজেন যুগিয়েছে কলকাতা পুরসভা নির্বাচন। আলিমুদ্দিনে স্বস্তি দিয়েছেন শহরের দুই প্রার্থী। সামনে বাকি এখনও অনেক পথ৷ রাজনীতির নিরিখে হয়তো তা ধ্রুবক। চড়াই-উতরাই বিদ্যমান। চড়াইয়ের বছরগুলো দেখেছে দল। উতরাই কি এখনও বাকি?

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কংগ্রেসের রাজত্ব৷ সীমান্ত বিবাদ তখনও জারি। বাংলাদেশের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। স্বাধীনতার আবহে এপার বাংলাতে স্বভাবতই হাত শিবিরের বজ্রমুষ্ঠি। এখনও পাড়ার বয়স্কদের মধ্যে কেউ আস্থা রাখেন কংগ্রেসের ওপরেই৷ বামেদের উত্থান অনেকটা পরে। সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা চলতে পারে অন্য কোনও প্রতিবেদনে। আপাতত আমেজটুকু এবং ইতিহাসের হাতছানিটুকু থাক।

দেশভাগের যন্ত্রণা তখনও ছিল। খাদ্য সংকট, শ্রমিক অসন্তোষ, ইউনিয়ন ইত্যাদি বহু দেখেছে শহর। দিনমজুর, কর্মী ইত্যাদিদের হাত ধরে ধীরে ধীরে বামেদের উত্থান। সাধারণ মানুষ মনে-প্রাণে চেয়েছিলেন টাটকা বাতাস৷ একছত্র কংগ্রেস রাজের জমানা থেকে বেরিয়ে আস্থা রেখেছিলেন লাল ঝান্ডার প্রতি৷ ‘বিপ্লব’ শব্দটি বাস্তবিক বিপ্লব এনেছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে। সাধারণ মানুষ চেয়েছিলেন তাই হয়েছিল, এ কথা বলা চলে।

এখন মানুষ কী চাইছেন? সাধারণ মানুষ ফের কি আস্থা দেখাবেন বামেদের প্রতি? পুরভোটের ফলের নিরিখে বামেরা তৃণমূলের তুলনায় বিন্দুবৎ। কথায় রয়েছে ‘নেই মামার থেকে কানা মামা ভালো’। কিন্তু ‘কানা মামা’কে সঙ্গে নিয়ে চলা সম্ভব ক’দিন?

ভোটে কাদের দিকে পাল্লা ভারী, কখন ভারী হতে পারে কিংবা পাল্লা ভারী করার জন্য কী করণীয় তা অনুমান করতে বুঝতে হবে মানুষের নার্ভ। ভোটাররা কী চাইছেন তা আঁচ করতে পারলে চলতে হবে ওই একচোখো হয়েই। দলের ব্যাটন এখনও বরিষ্ঠ বামনেতাদের হাতেই। এনারা সেই বামনেতা যাঁদের ক্ষমতার গদি থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। তরুণ নেতা-নেত্রীরা দলে রয়েছেন। একটা সময় পর পার্টির অলিন্দে নতুন প্রাণ সঞ্চার করার জন্য যা আবশ্যক। কিছু বাম নেতা নতুনদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে চেয়েছেন আগেই। কিছু নেতা দেখে নিতে চাইছেন আরও একটু। অর্থাৎ দলের মধ্যেই ভিন্ন মত। সাধারণ মানুষের কাছেও পৌঁছচ্ছে এই বার্তা- দলে একতার অভাব, মতের অমিল।

ভোট বৈতরণী পার করতে যারপনাই চেষ্টা চালিয়েছিলেন বিমান বসুরা। বিধানসভা ভোটে হাত মিলিয়েছিলেন কংগ্রেস এবং আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে। তৈরি হয়েছিল জোট। আব্বাসের ভাষণ কি আগে শোনেনি আলিমুদ্দিন? প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই। ব্রিগেডের মঞ্চে বাম-কং-আইএসএফ। এরপরের ঘটনা সকলের জানা। ২ মে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল অনেক কিছু। জোট আছে কে নেই, থাকলে আগামী দিনেও থাকবে কি না ইত্যাদি কিছু প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে এখনও। ইভিএমএ-এ বোতাম টিমে মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন, চলবে না এই জোট-জট। মানুষের নার্ভ বুঝতে পারেননি অভিজ্ঞ বাম নেতারা।

পুরভোটে একাই লড়ল বাম। প্রাপ্ত ভোটের শতাংশের নিরিখে উঠে এলো দ্বিতীয় স্থানে। ৬৫ টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় হয়েছেন বাম প্রার্থীরা। ভোট বেড়েছে ৮ শতাংশ।‌ ‘বামেরা কার্যত আইসিইউ-তে’ এমন কথা লেখা হয়েছে কাগজেও। সেই রেশ ধরে বললে বলতে হয়, কিছুটা অক্সিজেনের যোগান দিয়েছে কলকাতা। কলকাতা মানে? মানে, শহরের একাংশ মানুষ আস্থা দেখিয়েছেন একক বামেই।

এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে জেলা নেতৃত্বের প্রতি নেকনজর দিতে চলেছে রাজ্য নেতৃত্ব। বন্ধ ঘরে বসে কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে নেতারার চাইছেন গ্রাউন্ড জিরো রিপোর্ট। আঙুল কি পড়বে সাধারণের নার্ভে?