বিধানসভায় বিক্ষোভ, সাসপেন্ড ৪ বিজেপি বিধায়ক, মার্শাল ডেকে বার করলেন স্পিকার

BJP MLAs Suspended Bengal Assembly

সোমবার ফের উত্তাল হল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধিবেশন। সাসপেন্ড করা হল বিজেপির চার বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, দীপক বর্মণ, মনোজ ওঁরাও ও শঙ্কর ঘোষকে। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মার্শাল ডাকানো হয় তাঁদের অধিবেশন কক্ষ থেকে বার করে দিতে। অভিযোগ, ধস্তাধস্তির মাঝে বিধানসভা কক্ষেই পড়ে যান বিজেপির মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষ, ভেঙে যায় তাঁর চশমা।

Advertisements

এ ঘটনায় বিধানসভা গেটের বাইরে তীব্র বিক্ষোভ শুরু করে বিজেপি পরিষদীয় দল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তখন বিধানসভায় না থাকলেও ঘটনার কথা শুনে সেখানে ছুটে আসেন। প্রতিবাদে মঙ্গলবার অধিবেশন কক্ষের বাইরে ধর্নায় বসবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

কী ঘটেছিল অধিবেশন কক্ষে?

ঘটনার সূত্রপাত সকালে ‘মেনশন’ পর্বে শঙ্কর ঘোষকে বলতে না দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে। বিজেপি বিধায়করা স্পিকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন। পাল্টা চিৎকারে যোগ দেন তৃণমূল বিধায়কেরাও। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকলে স্পিকার হুঁশিয়ারি দেন- বিশৃঙ্খলা চললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর মধ্যেই বিজেপি বিধায়ক দীপক বর্মণের বিরুদ্ধে কাগজ ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানানোর অভিযোগ ওঠে। মহিষাদলের তৃণমূল বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী কটাক্ষ করে বলেন, “কালীগঞ্জে হারল কে?”— এর পরই বিক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।

মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের আবেদনে সাড়া দিয়ে স্পিকার চার বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করেন। তাঁদের বার করে দেওয়ার জন্য কক্ষে ঢোকেন বিধানসভার নিরাপত্তারক্ষী ও মার্শালরা।

 “চশমা ভেঙেছে, মাটিতে ফেলা হয়েছে”, বিজেপির অভিযোগ BJP MLAs Suspended Bengal Assembly

সাসপেন্ড হওয়া বিধায়কদের বার করতে গিয়ে রক্ষীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয় বলে অভিযোগ। কক্ষেই পড়ে যান শঙ্কর ঘোষ। বিজেপির অভিযোগ, তাঁর চশমা ভেঙে গিয়েছে। বিধানসভার বাইরে বিক্ষোভে যোগ দিয়ে অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, “আমাদের মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়েছে। তারপর বার করে দেওয়া হয়েছে। এ রাজ্যে গণতন্ত্র নেই।”

এমনকি কক্ষ থেকে বার করে দেওয়া হয় বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামীকেও। সেই সময় তাঁর সঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের তীব্র কথাকাটাকাটি হয় বলে জানা গিয়েছে।

Advertisements

শুভেন্দুর কড়া প্রতিক্রিয়া

শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, “স্পিকারের নির্দেশে বিজেপি বিধায়কদের উপর আক্রমণ হয়েছে। মিহির গোস্বামীকে ক্যাডারদের দিয়ে বার করে দেওয়া হয়েছে। একজনও নিরপেক্ষ মার্শাল ছিল না।”

তিনি আরও বলেন, “আমি শঙ্কর ঘোষের চশমা, শান্তনু প্রামাণিকের চশমা, কাঞ্চন মৈত্রের ঘড়ি স্পিকারের কাছে রেখে এসেছি প্রমাণস্বরূপ। তবু কোনও বিচার মেলেনি।”

শুভেন্দুর অভিযোগ, “২০ জন মহিলা রক্ষী দিয়ে আমাকে ঘিরে রাখা হয়েছিল। ইচ্ছা করেই উস্কানি দেওয়া হয় যাতে আমি হস্তক্ষেপ করি। আমি পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকি, বলি— জোর করে বার করতে হবে।”

কী হতে চলেছে মঙ্গলবার?

ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিধানসভার শেষ দিনেও ধর্নায় বসবেন বিজেপি বিধায়কেরা। শুভেন্দু জানিয়েছেন, প্রতিবাদ চলবে যত দিন না স্পিকার নিরপেক্ষ তদন্তে রাজি হন।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাসক ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে ফের একবার রাজনৈতিক টানাপোড়েন তীব্র হল। প্রশ্ন উঠছে- বিধানসভার পবিত্রতা ও গণতান্ত্রিক পরম্পরা কি আদৌ বজায় থাকছে?